হুমায়ূন আহমেদের ৩টি গোপন চিঠি ফাঁস

প্রকাশ: ২০১৬-০৫-৩১ ১৪:৪০:২০


Humayan Ahmedকথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের বিপুল সংখ্যক উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, শিশু-কিশোরতোষ রচনা, ভ্রমণকাহিনী, মুক্তগদ্য ইত্যাদি প্রকাশিত হলেও তার চিঠিপত্রের সম্পূূর্ণ সংকলন অদ্যাবধি প্রকাশিত হয়নি। তবে ‘সুনীলকে লেখা চিঠি’ [তালপাতা, কলকাতা, ২০১২], ‘চিঠিপত্রে চিত্তরঞ্জন সাহা’ [মুক্তধারা, ২০০৯] এবং মিন্নাত আলীর ‘সাহিত্যিকের পত্রালাপ’ [মীরা প্রকাশন, ২০০২] গ্রন্থগুলোর সূত্রে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হুমায়ূন আহমেদের তিনটি চিঠির সন্ধান পাওয়া যায়।

প্রয়াত কথাশিল্পী মিন্নাত আলী হুমায়ূন আহমেদের ‘১৯৭১’ উপন্যাস পড়ে যে চিঠি দেন, মূলত তার উত্তর হিসেবে লেখা হুমায়ূন আহমেদের চিঠিটি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। দেখা যাবে পাঠকের প্রতিক্রিয়াকে হুমায়ূন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতেন। লেখক হিসেবে তার আত্মসমালোচনাও লক্ষ্য করা যাবে, যা প্রকৃত গুণী লেখকের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের পথিকৃৎপ্রতিম চিত্তরঞ্জন সাহাকে লেখা চিঠিতে অনুজ লেখকের প্রতি তার অসামান্য দায়বোধেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণ রক্ষা করায় কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লেখা চিঠিতে এক সংবেদী পিতৃহৃদয়ের সন্ধান পাব আমরা। বিয়ের আসরে কন্যা তার প্রিয় লেখককে দেখে আনন্দিত হবে- এই অনুভূতি যেমন কন্যাঅন্তঃপ্রাণ মনের পরিচয়বহ, তেমনি অগ্রজ লেখকের প্রতি তার সম্মানবোধেরও সাক্ষ্য। এই চিঠি একান্ত ব্যক্তিগত হয়েও নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনায় ভাস্বর।

চিঠি তিনটির প্রেরক হুমায়ূন আহমেদ এবং তিন জন প্রাপক- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন সাহা ও মিন্নাত আলীও এখন প্রয়াত। তাদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা।

এক. মিন্নাত আলীকে লেখা চিঠি
রসায়ন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা-২, বাংলাদেশ
টেলিফোন :৫০৬৩৬০

শ্রদ্ধাস্পদেষু,

আমার সালাম জানবেন। আপনার চমৎকার চিঠি বেশ কয়েকবার পড়লাম। আপনার প্রশ্ন- ইমাম সাহেব ফজরের আজান ক’বার দিলেন? উনি হয়ত একবারই দিতেন-লেখকের জন্যে বেচারাকে দু’বার দিতে হল। ইমাম সাহেবের কোন দোষ নেই। তিনি একবারই দিতে চেয়েছিলেন। অসতর্ক লেখকের পাল্লায় পড়ে বেচারার এই ভোগান্তি। হা হা হা।

মুসলমানী নাম প্রসঙ্গে বলি আমার দেয়া সংলাপ ছিল এ রকম- ছেলেটি বলেছে, মেয়েদের কত সুন্দর নাম আছে কিন্তু ছেলেদের নেই- আবদুল সোভাহান… কি বিশ্রী। যেহেতু আমাদের অধিকাংশ নামই আল্লাহ বা তাঁর প্রেরিত পুরুষদের সঙ্গে মেলানো কাজেই এদের বিশ্রী বলে বিতর্কে যাওয়া যাবে না। এখানেও মুস্তাফিজুর রহমান সাহেবকে অজ্ঞতার দায়ে দায়ী করা যাবে না। আমি বোধ হয় ব্যাপারটা গুছিয়ে বলতে পারিনি। আপনার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমি আপনার লেখার সঙ্গে পরিচিত।

আপনাকে আমি একজন সাহসী মানুষ বলে জাানি। এ দেশে সাহসী মানুষের বড়ই অভাব। আপনার চিঠির শেষ দিকে ভাল ছাত্র না হতে পারার জন্যে একটা খেদ লক্ষ্য করে অবাক হলাম। আপনারতো এসব থাকার কথা নয়। নাকি সত্যি সত্যি বুড়ো হয়ে গেছেন? ভাল থাকবেন। শরীরের যত্ন নেবেন।

আপনার স্নেহধন্য
হুমায়ূন আহমেদ
৯/৭/৮৫

দুই. চিত্তরঞ্জন সাহাকে লেখা চিঠি

ড. হুমায়ূন আহমেদ
রসায়ন বিভাগ ঢা.বি.

চিত্তবাবু শ্রদ্ধাস্পদেষু,

আমার সালাম জানবেন। আমার ছোট ভাই ড. জাফর ইকবালের নতুন বই আপনাদের প্রকাশনা থেকে বের হবার কথা ছিল। সেটি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম। একটু খোঁজ নিয়ে বললে বাধিত হব। ওর আরেকটি প্রথম শ্রেণীর কিশোর উপন্যাস ‘হাত কাটা রবিন’ মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশ করেছিল ১৯৭৬ সনে। বইটি দীর্ঘদিন যাবত মাওলা ব্রাদার্স পুস্তক প্রকাশনা থেকে সরে এসেছে। আপনারা যদি তার এই বইটি প্রকাশ করেন তাহলে ভাল হয়।

কারণ ওর বেশির ভাগ বইয়ের প্রকাশক আপনারা। জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস ‘দীপু নাম্বার টু’ প্রকাশিত হয়েছে সম্প্র্রতি। প্রকাশ করেছে শিশু একাডেমী। আপনাকে তার একটি কপিও পাঠালাম। জাফর ইকবালের কিছু টাকা-পয়সা বোধ হয় আপনাদের কাছে পাওনা হয়েছে। একটু দেখবেন কি?

বিনীত
হুমায়ূন আহমেদ

তিন. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা চিঠি

জনাব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শ্রদ্ধাস্পদেষু

সুনীলদা, মাজহারের কাছে শুনেছি, আপনি আমার বড় মেয়ের বিয়েতে আসতে রাজি হয়েছেন। নিজে এসে আপনাকে এবং স্বাতীদিকে নিমন্ত্রণ করা উচিত ছিল। শরীরটা বেশ ভাল না, এবং “দুই দুয়ারী” নামের যে ছবিটি বানাচ্ছি তা নিয়ে অসম্ভব ব্যস্ত। চিঠি দিয়ে দাওয়াত করছি। এই অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। বিয়ের আসরে আমার মেয়ে আপনাদের দু’জনকে দেখে খুশিতে ঝলমল করে উঠবে এই দৃশ্য কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি। এবং আনন্দে আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে।

বিনীত

হুমায়ূন আহমেদ
৬.১২.২০০০

সানবিডি/ঢাকা/এসএস