পরিবেশবান্ধব বাজেট চাই

প্রকাশ: ২০১৬-০৫-৩১ ২১:৩৬:৩৯


Environment Friendly Budge-Kazi Sazedur rahman
তরুণ উদ্যোক্তা ও স্বত্বাধীকারি, কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা

এই মুহূর্তে দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে মানুষের জীবন ধারার উপর যে প্রভাব তা বিবেচনা করলে যে বিষয়টি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল পরিবেশ বাঁচাও। সেই প্রেক্ষিতে আমি মনে করি, আসছে বাজেট প্রনয়ণের আগে এটা চিন্তা করতে হবে যে, তা কতটা পরিবেশবান্ধব।

আরো একটা বিষয় পরিলক্ষিত যে, দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ঠিকই কিন্তু সমগ্র জনগোষ্ঠী তার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে পারছে না। এর বিশেষ কারণ হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবিধা খুব অল্প সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কাছে গচ্ছিত হয়ে যাওয়া। এ জন্যও বাজেট প্রণয়নে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত যাতে তা গণমুখী হয়।

পরিবেশ বান্ধব বাজেট বলতে বুঝায়, যে বাজেট পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে। যেমন: সরকার যখন কোন উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য বাজেট বরাদ্দ করে তখন একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা যে উক্ত কাজে পরিবেশের উপর ক্ষতির প্রভাব কত এবং উক্ত ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়নের কোন ব্যবস্থা আছে কিনা। হতে পারে তা সবুজায়নের মাধ্যমে এবং সেই সাথে জীব বৈচিত্রের সামঞ্জস্য টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে।

বর্তমান এই শিল্পায়নের যুগে পরিবেশ বান্ধব শিল্প স্থাপন ও পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রণয়ন করা যেতে পারে। পরিবেশ বান্ধব পণ্য বলতে বুঝায়, যে সকল পণ্য পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে। যে সকল পরিবেশ বান্ধব পণ্য দেশীয় কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত হয় তাদের কে বিশেষ ব্যবস্থায় ভ্যাট মওকুফ ও ইনসেনটিভ সুবিধা দেওয়া যেতে পাওে তার যে সেকল পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় সে সকল ক্ষেত্রে পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ০- ৫ শতাংশ এ নিয়ে আসা যেতে পারে।

বর্তমানে দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এসএমই সেক্টরের ব্যপক অবদান লক্ষ্য করা যায় যা বংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শতকরা ৩০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় অবদান রেখে চলেছে। এই জন্য এসএমই পর্যায়ে পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তা তৈরিতে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে সারা দেশব্যাপি নতুন নতুন উদ্ভাবনি পণ্য যা কিনা পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে সে ধরনের শিল্পের প্রসার ঘটানো যেতে পারে। এ ছাড়াও যে সকল উদ্যোক্তা ইতিমধ্যে এই ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে তাদেরকে আরও বড় শিল্প তৈরির ক্ষেত্রে সক ধরনের সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে। পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি ভাবে শিল্প প্লট প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের মাধ্যমে এই ধরনের শিল্পের প্রসার ঘটানো যেতে পারে।

এসএমই খাতের শিল্প স্থাপনে ব্যাংক ঋণ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ প্রদান করে থাকে কিন্তু এসব ঋনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, ঋণ না পাওয়া এবং ঋণের বিপরীতে সুদের হার অনেক বেশি হওয়ায় সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঋণ বিতরনের ব্যবস্থা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে এসএমই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এসএমই ব্যাংক চালু করে সেখানে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে।

পণ্যের প্রচার ও প্রসার ব্যতিত কোন পণ্যেরই ব্যাপকতা সৃষ্টি করা যায় না। সে জন্য যে সকল পণ্য পরিবেশ বান্ধব সেই সকল পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। আর সেই সাথে যে সকল পণ্য পরিবেশকে ধ্বংস করছে যেমন পলিথিন বা প্লাস্টিক এর তৈরি ওয়ান টাইম পণ্য এই সকল পণ্যের উৎপাদন ও বিপনন সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করা।

পরিবশে বান্ধব বাজেট সফল হবে তখনই যখন সেখানে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। সে জন্য সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে এবং এ সকল পদক্ষেপ এর ক্ষেত্রে দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করা যেতে পারে।
সর্বোপরি এ দেশটি আমার এবং আমাদের সকলের তাই দেশটির পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সকলকে ভূমিকা নিতে হবে।

সানবিডি/ঢাকা/আহো