তুরস্ক, মিশর ও চায়না থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০৮-২০ ২১:১৮:৪২
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও বাংলাদেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, প্রয়োজনে তুরস্ক, মিশর ও চায়না থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হবে।
রোববার (২০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি) মিলনায়তনে দেশে প্রথমবারের মতো বিটি তুলার দুটি জাতের অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছি, দেশে এসেছে মাত্র তিন লাখ টন। এর অর্থ হলো দেশেও পেঁয়াজ আছে। মাঠ পর্যায়েও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের কাছে এখনো তুলনামূলকভাবে পেঁয়াজের মজুত আছে। কাজেই, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না। শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এখন দাম কিছুটা বাড়লেও কয়েক দিন পর কমে আসবে।
এসময় তুলা প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে বছরে ৮৫ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন হয়, আর উৎপাদন হয় দুই লাখ বেল। চাহিদার কমপক্ষে ২০ শতাংশ বা ১৫ লাখ বেল তুলা দেশে উৎপাদন করার সুযোগ রয়েছে। সে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে কাজ করতে হবে। হাইব্রিড ও বিটি তুলার চাষ করতে পারলে দেশে বছরে ১৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব হবে।
মন্ত্রী বলেন, দেশে তুলার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আগামীতে আরও বাড়বে। বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মীসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে দেশেই চাহিদার ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদন করা যায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, সিডিবির অতিরিক্ত পরিচালক শেফালী রানী মজুমদার বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডিবির নির্বাহী পরিচালক ফখরে আলম ইবনে হাবিব। তিনি জানান, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮৫ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে। দেশে উৎপাদন হয় মাত্র দুই লাখ বেল।ফলে বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানিতে বছরে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। তবে দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ১৬ লাখ বেল তুলা।
তিনি জানান, বিটি তুলা চাষ করে বিশ্বের অনেক দেশ আমদানিকারক দেশ হতে রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে ১৯৯৬ সালে প্রথম বিটি তুলার চাষ করা হয় এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০০২ সালে বিটি তুলার চাষ শুরু হয়। বায়োসেফটি গাইডলাইন অনুযায়ী সব গবেষণা কার্যক্রম সমাপ্তির প্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালের ৭ মে ন্যাশনাল কমিটি অন বায়োসেফটি কর্তৃক ভারতের জে কে এগ্রি-জেনেটিক্স লিমিটেডের উদ্ভাবিত দুটি তুলার জাত জে কে সি এইচ ১৯৪৭ বিটি এবং জে কে সি এইচ ১৯৫০ বিটি মাঠ পর্যায়ে অবমুক্তির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রবন্ধে জানানো হয়, বিটি তুলার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ কেজি। বিটি তুলা চাষে বলওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় ১২-১৫ শতাংশ কমবে এবং উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বাড়বে। বিটি তুলা চাষে প্রাকৃতিক দূষণ কম ও কৃষকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।
প্রবন্ধে আরও জানানো হয়, বর্তমানে হাইব্রিড তুলা চাষ লাভজনক। দুই বিঘা তুলা চাষে এক লাখ টাকারও বেশি আয় করতে পারেন যা, বর্তমান বাজারে লাভজনক। এছাড়াও, তুলাবীজ বপনের পর প্রথম দেড় মাস স্বল্পকালীন শাক-সবজি (যেমন: লাল শাক, ডাটা শাক), মসলা জাতীয় ফসল (যেমন: গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ধনেপাতা) এবং ডাল জাতীয় ফসল (যেমন: মুগ, মাসকলাই) আবাদ করে চাষিরা বাড়তি আয় করতে পারেন।
বর্তমানে এক কেজি তুলা উৎপাদনের ফলে তিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয় এবং প্রতি টন তুলাবীজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে পাঁচজন লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তুলা থেকে আঁশ ছাড়াও ভোজ্যতেল, খৈল ও জ্বালানি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। তুলাবীজ হতে ১৫-২০ শতাংশ ভোজ্যতেল পাওয়া যায়, যা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর। শস্যবিন্যাসে তুলা চাষের পর একই জমিতে বোরো ধান, আউশ ধান, ভুট্টা, মুগ, তিল বিভিন্ন এলাকায় লাভজনকভাবে আবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে কৃষিমন্ত্রী খামারবাড়ি সড়কে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নবনির্মিত ‘তুলা ভবন’ উদ্বোধন করেন।
এএ