গম, সার, এলএনজি ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ ২৪ ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন
প্রকাশ: ২০২৩-১০-২৫ ১৮:৩৯:৪৯
গম, সার, এলএনজি ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ ২৪ ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪ হাজার ৩৪৬ কোটি ১২ লাখ ২৮ হাজার ৫৫০ টাকা।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় ক্রয়প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি জানান, আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৫তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় কমিটির ২৪টি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত ২৪টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৪ হাজার ৩৪৬ কোটি ১২ লাখ ২৮ হাজার ৫৫০ টাকা।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ৯ম শ্রেণি, দাখিল ৯ম শ্রেণি, কারিগরি ৯ম শ্রেণি, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং শিক্ষক সহায়িকা ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিইসি কর্তৃক ৯৮টি লটে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা, ৪১টি লটে ২য় সর্বনিম্ন দরদাতা, ১০টি লটে ৩য় সর্বনিম্ন দরদাতা এবং ১টি লটে ৪র্থ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার ৮১৫ টাকা। প্রতি পাঠ্যপুস্তকের দাম পড়বে ৩৮.৬০ টাকা।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়া থেকে ২য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সার ৩২৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৯৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
সভায় ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন (এসসিআরডি)’ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১)নিপ্পন কোই লিমিটেড; (২) কোই রিচার্স অ্যান্ড কনসাল্টিং ইনকরপোরেশন; (৩) নিপ্পন কোই বিডি লিমিটেড এবং (৪) রিসোর্স প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৩১ টাকা।
আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-৩ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাগোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুররের কাছ এই গম সংগ্রহ করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ২৯৮.১৯ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৯ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা)। প্রতি কেজি গমের দাম ৩২.৯৫ টাকা।
চট্টগ্রাম সাইলোর বিএমআরই করার কার্যক্রম সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভিগান ইঞ্জিনিয়ারিং এসএ, বেলজিয়ামের দাখিল করা প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। পরে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এতে ব্যয় হবে ৬৩ কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার ১৮৬ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৪১৩.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সারের মোট মূল্য ১ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৬ কোটি ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা)।
কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৮ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৬৯ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩১ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা)।
চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের (টিএসপিসিএল) জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী: মেসার্স জেন ট্রেড এফজেডই, ইউএই) থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট ক্রয়ে ব্যয় হবে ৮৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৫ কোটি ৬৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা)। প্রতি মেট্রিক টন রক ফসফেটের দাম ৩৪৭.৯০ মার্কিন ডলার।
সভায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই ডাল সরবরাহ করবে। প্রতি কেজি ১১০.৯৭ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৪০ লাখ (+৫%) লিটার রাইস ব্রান তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে এই তেল বিক্রি করা হবে। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান মজুমদার ব্রান অয়েল মিলস লিমিটেড ২ লিটারের পেটজাত বোতলে রাইচ ব্রান তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৫৬.২৫ টাকা হিসেবে ৪০ লাখ লিটার রাইস ব্রান তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড ২ লিটারের পেট বোতলে এই তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৫৬.৩৮ টাকা হিসেবে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১২৫ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সভায় ‘বাগেরহাট জেলার সাইনবোর্ড-মোড়েলগঞ্জ-রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পানগুচি নদীর উপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) কেইউএনএইচডব্লিউএ; (২) টিইএপি এবং (৩) বিসিএল-কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ।
‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট (বাংলাদেশ)’ প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে যৌথভাবে (১) ওরিয়েন্টাল কনসালটেশন গ্লোবাল কোং লিমিটেড, জাপান; (২) ওরিয়েন্টাল কনসালটেশন কোং লিমিটেড, জাপান; (৩) পেডিকো কোং লিমিটেড, জাপান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৬ কোটি ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯৫ টাকা। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধি হওয়ায় পরামর্শক সেবার জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৫২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং’ প্রকল্পের ড্রেজিং কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের কাজ যৌথভাবে (১) জেএইচসিইসি চায়না এবং (২) সিসিইসিসি, চায়নার কাছ থেকে ডেজিংয়ের পূর্ত কাজ ৭২৬ কোটি ১০ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৫ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় চুক্তিবহির্ভুত কাজ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৯৪ কোটি ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৮৯১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
‘চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে আরসিসি জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ’ পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত একমাত্র রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়রিং লিমিটেডের কাছ থেকে ৩৫৫ কোটি ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার ২৭৬ টাকায় বর্ণিত পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জামালপুর সদর উপজেলায় ১৮০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য যৌথভাবে (১) ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং (২) এইচ বিজিসি প্রস্তাব দাখিল করের। বিউবো এবং পিইসি কর্তৃক প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদে ১৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদনের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে উক্ত কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১০.৯৮৯ টাকা হিসাবে আনুমানিক ৬ হাজার ৪১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় ১৩০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অপর একটি দরপ্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যৌথভাবে স্থাপন করবে (১) এনারগন রিনিউয়াবল (বিডি) লিমিটেড এবং (২) পিডব্লিউআর এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি। বিউবো এবং পিইসি কর্তৃক প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতার সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদে ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে উক্ত কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১১ টাকা হিসেবে আনুমানিক ৪ হাজার ৬৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি-পাওয়ার্ড কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস টারবাইনের ক্ষতিগ্রস্ত কম্প্রেসর মেরামত সেবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৬৭ কোটি ৯৮ লাখ ১৭ হাজার ২৬৭ টাকা।
‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্পের লট-১ এর আওতায় ২৪ হাজার ৩০০টি এসপিসি পোল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ কাজের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। সবগুলো দরপ্রস্তাবই রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) টিএসসিও পাওয়ার লিমিটেড (২) কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং (৩) ভিকার কক্রিট প্রডাক্টস পোলগুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৪০ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৭ টাকা।
‘বাপবিবো’র বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্পের লট-৩ এর আওতায় ২৪ হাজার ২৯৭টি এসপিসি পোল ক্রয়ের অপর একটি প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পোল ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। সবগুলো দরপ্রস্তাবই রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) কনটেক কন্সট্রাকশন লিমিটেড, (২) পোলস অ্যান্ড কক্রিট লিমিটেড এবং (৩) পাশা পোলস লিমিটেড এই পোলগুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ২৮৭ টাকায়।
পেট্রোবাংলা ও এক্সসেলরেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে ডিড অব অ্যামেন্ডমেন্ট টু দি এলএনজি ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট ড্রাফটে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চুক্তির আওতায় গত ১৯/০৮/২০১৮ তারিখ থেকে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে আরএলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। মহেশখালীতে বিদ্যমান এলএনজির রিগ্যান ক্যাপাসিটি ৫০০ এমএমসিএফডি হতে ৬০০ এমএমসিএফডি বৃদ্ধি করে এক্সসেলরেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক এলএনজি টার্মিনালের এক্সপানশন সংক্রান্ত ডিড অব অ্যামেন্ডমেন্ট টু দি এলএনজি ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট ড্রাফটে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে রিগ্যান ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করবে। দৈনিক রিগ্যাসিফিকেশন ফি ০.৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমে ০.৪১ মার্কিন ডলার হবে। এতে পেট্রোবাংলা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। যা ২০২৪ সালে ড্রাই ডকিংয়ের পর হতে কার্যকর হবে।
সভায় এক্সেলারেট গ্যাস মার্কেটিং লিমিটেডের পার্টনারশিপের কাছ থেকে এলএনজি সরবরাহের দরপ্রস্তাব ও ড্রাফট এলএনজি এসপিএ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে কক্সবাজারে মহেশখালীতে স্থাপিত এক্সেলারেট গ্যাস মার্কেটিং লিমিটেডের পার্টনারশিপের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব দাখিল করে। পিপিসি কর্তৃক প্রস্তাবটি নেগোসিয়েশন করে ১৫ বছর মেয়াদে জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ০.৮৫ এমটিপিএ এবং ২০২৮ সাল থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত ১.০০ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে নেগোসিয়েশনকৃত দরপ্রস্তাব চূড়ান্ত করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৩ সালের ২৩তম) এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ চুক্তির আওতায় এই এলএনজি আমদানি করা হবে। এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। সবগুলো প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি’র (পিপিসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সিঙ্গাপুর এই এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৭.৫৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৭৬২ কোটি ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮০ টাকা।
সভায় টেবিলে ‘হার পাওয়ার প্রকল্প প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার ১২৫টি ল্যাপটপ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ২টি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ল্যাপটপ গুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬৫ কোটি ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫ টাকা। প্রতিটি ল্যাপটপের দাম ৬৫ হাজার ৬৭৭ টাকা। প্যাকেজের আওতায় দেশের ৪৪টি জেলার মোট ১৩০টি উপজেলায় তথ্য প্রযুক্তিতে নারীদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ২৫ হাজার ১২৫ জন নারীকে ৫ মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ল্যাপটপ বিতরণ করা হবে।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় দুটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে অতিরিক্ত সচিব জানান।
এএ