রদ্দি মার্কা বেইমান দলছুটেরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে: রিজভী
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-১১-২২ ২০:২৩:৩৮
এক দফার আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে যাওয়া দল ও এর নেতাদের ‘নব্য রাজাকার’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
‘নব্য রাজাকারদের’ উদ্দেশে রিজভী বলেছেন, ‘কিছু লোক সামান্য খুদ-কুড়োর লোভে বিবেক বিবেচনাহীনভাবে তামাশার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই সব রদ্দি মার্কা বেইমান দলছুটেরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।’
এদিন সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে একটি জোটের ঘোষণা আসে যার নেতৃত্বে আছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টি। এরই মধ্যে নির্বাচনে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে নতুন জোটটি। সম্প্রতি তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসহ (বিএনএম) আরও কিছু দলেও এমন তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।
এই প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘কিন্তু এই সমস্ত রং বদলানো পরজীবী রাজনীতিবিদেরা জনগণের সংকেত বার্তা টের পাচ্ছেন না। জনগণ খুব দ্রুতগতিতে ধেয়ে যাচ্ছে সরকারের সিংহাসন ধুলোয় লুটিয়ে দিতে। জনগণের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করতে পারছে না এই নব্য রাজাকারেরা।’
জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের পথেই হাঁটছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জনগণ তফসিল প্রত্যাখ্যান করায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এখন মঈন-ফখরুদ্দিনের মত তথাকথিত কিংস পার্টি, ভুঁইফোড় পার্টি, ড্রিংকস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি তৈরি করে তাদের দিয়েই তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শেখ হাসিনা তাঁর এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন তথাকথিত কিংস পার্টি গঠনের জন্য। বিভিন্ন দল থেকে নেতা কিনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে। আওয়ামী সরকারের কিংস পার্টিতে যোগ দিতে দেশপ্রেমিক বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন-ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছলে বলে কৌশলে, টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে বাগানো হচ্ছে। আবার কেউ কেউ জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে না গিয়ে বিরোধী দলের লেবাসে ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে তথাকথিত এই সব কিংস পার্টি, ভুঁইফোড়, ছিন্নমূল পার্টি হালুয়া-রুটির ভাগ প্রাপ্তির লালসায় ফ্যাসিস্টদের বর্তমান আস্তানা গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটোছুটি করছেন।’
এ সময় সারা দেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৫১৫ জনের অধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ সময় মামলা হয়েছে ২১টি, আসামি করা হয়েছে ২ হাজার ৩১৫ জনের বেশি এবং আহত হয়েছেন শতাধিক।
রিজভী বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বেছে বেছে তাঁদের বাড়িতে হেলমেট বাহিনী হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। গুপ্ত হামলা, বোমা হামলা চালাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থীদের ধরে নির্যাতন করে পুলিশে দিচ্ছে। আবার আটক বাণিজ্য করছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর ১৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গণবিচ্ছিন্ন এ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে অতীতের মত প্রহসন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার উদগ্র বাসনা থেকেই চরম নির্লজ্জভাবে জুলুম-নির্যাতন, চক্রান্ত, নাশকতা ও মিথ্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতা-কর্মীকে সাজা দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা দেওয়া হচ্ছে। আগে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে ভোট দিত আর এখন মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দল করলে মরেও শান্তি নাই।
রিজভী আরও বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য ফ্যাসিবাদী এই সরকার নিজেরা আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়া ওয়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে। আর বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ যারা ধরা পড়ছে, তারা ক্ষমতাসীনদের লোক। জনগণের সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করতে সারা দেশে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা এ রকম বোমা বানিয়ে বোমা হামলা করছে এবং অগ্নি সন্ত্রাস চালাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব-ক্ষমতায় থাকার এই সব পরিকল্পনা বন্ধ করে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় পতনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। যে পতন হবে আপনার দলের জন্য খুবই দুঃখজনক।’
এএ