সাবেক শিক্ষার্থী নিহত: ক্ষতিপূরণ নিয়ে আটককৃত বাস ছাড়ল জাবি প্রশাসন

জাবি প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৩-১২-১২ ১৩:৩৫:৫২


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের ৪০ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ৪১ তম বিসিএসে (শিক্ষা) সুপারিশপ্রাপ্ত মোহাম্মদ রুবেল পারভেজ বাসের রেষারেষিতে নিহতের ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক করা ‘সেলফি’ পরিবহনের ১৫ টি বাস ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে একে একে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রুবেলের পরিবারকে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ ৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আরও ৫ লাখ টাকা দেবে উপজেলা প্রশাসন।

এর আগে, গতকাল সাভারের ইউএন‌ও কার্যালয়ে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি, প্রক্টর আ সম ফিরোজ-উল-হাসানসহ কয়েকজন আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ আট লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। সাভার উপজেলা প্রশাসন থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মোট ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে নিহত রুবেলের পরিবার।

নিহতের পরিবার পক্ষ থেকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সুরাহা করতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফিকে প্রতিনিধি করা হয়। তিনি বলেন, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নগদ আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। আর পাঁচ লাখ টাকা সরকারি ফান্ড থেকে দেওয়া হবে। আট লাখ টাকা নিহত রুবেলের ভাই ও শ্যালকের কাছে দেওয়া হয়েছে।

সেলফি পরিবহনের ব্যবস্থাপক পরিচালক জালালউদ্দিন বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে বিষয়টি সমাধান করেছি। আমরা নিহত রুবেলের বাচ্চার ভরণপোষণের দায়িত্বও নিয়েছি।’

নিহত রুবেল পারভেজের পরিবারে ১৬ মাস বয়সী সন্তান আছে, স্ত্রী আছেন। তিনি পরিবারসহ সাভার ধামরাইয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বাড়িতে মা আছেন। তাঁর ছোট ভাইয়েরা পড়াশোনা করছেন। তিনি বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন এবং ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। রুবেলই পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রুবেল, মান্নান ও আরেকজন পথচারী। এ সময়, ঢাকাগামী সেলফি পরিবহনের দুই বাস পাল্লাপাল্লি করে একে অপরকে ওভারটেক করার চেষ্টা করলে তাদেরকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পারভেজ ও মান্নান মারা যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ নিহত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের বাস আটকানো শুরু করে। এর আগেও বিভিন্ন সময় সেলফি পরিবহনের বেপরোয়া গতি এবং চালকের সহকারীদের খারাপ আচরণ, হাফ ভাড়া নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি কারণে বাস আটক করে শিক্ষার্থীরা। তাই সেলফি পরিবহনের প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল তাঁদের। বাসের চাপায় রুবেল পারভেজের নিহত হওয়ার পর এ ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রুবেলের পরিবারের জন্য ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন এবং অনতিবিলম্বে সেলফি পরিবহনের রুট পারমিট বাতিলের দাবি জানায়। এ নিয়ে পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েক দফায় আলোচনা চলে। তারা প্রথম দফা আলোচনায় তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল।শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।শেষ পর্যন্ত আলোচনা শেষে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে পাঁচ দিন পর বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হলো।

এম জি