সংবাদ সম্মেলনে পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান
পিপলস লিজিংয়ে আসছে বিদেশি বিনিয়োগ, শুরু হয়েছে ঋণ বিতরণ
আপডেট: ২০২৩-১২-২৮ ২৩:০২:০১
পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পিপলস লিজিংয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাসান শাহেদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দুবাইয়ের একটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে আমানত আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দুই থেকে আড়াইশো কোটি টাকা পাবো। তবে এখনো পর্যন্ত এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কোন ধরনের সমঝোতা হয়নি। টাকা পেলে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) পিপলস লিজিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আদালত থেকে নিয়োজিত চেয়ারম্যান হাসান শাহেদ ফেরদৌস।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা হাউজ লোন এবং কার লোন দিতে শুরু করেছি। চার পাঁচ মাস ধরে আমরা নিয়মিতভাবে ঋণ দিয়ে যাচ্ছি। নতুন বিনিয়োগের লক্ষ্যে ৪০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। চাহিদার আলোকে আরও দেয়া হবে। আমাদের পরিকল্পনা আছে ৫০ কোটির মতো ফিক্স ডিপোজিট করব। এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিব। যার সুদ হবে চার থেকে পাঁচ শতাংশ। এই টাকা ৮ থেকে ১২ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করে কোম্পানি লাভ করবে।
হাসান শাহেদ ফেরদৌস বলেন, আমরা খুবই দূরাবস্থায় ছিলাম এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ২০২১ সালে আদালতের নির্দেশে আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠন করতে মনোযোগী হয়েছি। ইতোমধ্যে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে পিপলস লিজিং। দেড়শ কোটি টাকা নিয়ে আমি দায়িত্ব শুরু করি। বর্তমানে ভালো অবস্থান হয়েছে। আমাদের ৩০ কোটি টাকা এফডিআর আছে। বর্তমানে আমাদের মাসিক গড় ইনফ্লো (আদায়) তিন কোটি টাকা। মাঝে মধ্যে এটি ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ওঠে।
তিনি বলেন,পৃথিবীর কোনো দেশেই কোম্পানি বন্ধ থাকা অবস্থায় সুদ গণনা করে না। দীর্ঘদিন থেকে আমাদের কোম্পানি বন্ধ ছিল। তাই বন্ধ থাকা অবস্থায় সুদ হিসাব জাস্টিফাইড (গ্রহণযোগ্য) নয়। তাই পিপলস লিসিংয়ের বিনিয়োগকারীদের বলে দিয়েছি ১২ থেকে সাড়ে ১২ শত কোটি টাকা সুদ দেব না। এজিএমে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। সুদ বাদ দিলে প্রকৃত দায় সাতশ থেকে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা হবে। বাকি টাকা আমরা দিব না। কারণ প্রায় দুই বছর লিকুআইডিশনে ছিল। যেহেতু এই সময়ে ক্যাপিটাল ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না, তাই এ সময়কার সুদ গণনার না করার বিষয়ে আমাদের নিজস্ব অডিটর ও এক্সটার্নাল অডিটরগণ মোটামুটি একমত।
তিনি বলেন, পিপলস লিজিংয়ে জন্য একটি ভালো দিক হচ্ছে কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া পানাওনাদাররা কেউই সিকিউরিটি ডিপোজিটর না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা আমানতকারীদের ফেরত দিয়েছি। দেউলিয়া হয়ে গেলে টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ ছিল না। আমরা ছোট আমানতকারীদের টার্গেট করে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছি। ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে এমন প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি লোককে পুরো টাকা ফেরত দিয়েছি। এখন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা আমানত রয়েছে এমন গ্রাহকদের অগ্রাধিকার দিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি লাভ করছে এবং ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে তাই অনেক আমানতকারী টাকা তুলতে চাচ্ছেনা লাভের আশায়।
অন্যায়ভাবে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে অভিযোগ করে শাহেদ ফেরদৌস বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অতিমাত্রায় চাপাচাপি করছে। যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোন ভালো ফল বয় আনছে না। নিয়ন্ত্রকের চাপাচাপির কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে ১০ থেকে ১২ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পড়ে যাবে (দেউলিয়া)। তিনি বলেন, টুটি চেপে ধরলে কেউ টিকতে পারে না। এত রেগুলেশন কি দরকার আমার বুঝে আসেনা। সবশেষ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা নিয়েও আপত্তি তোলেন তিনি। রেগুলেটকে অতিমাত্রায় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি যে ভালো অবস্থান রয়েছে তাতে শেয়ার মার্কেটে লেনদেন শুরু হলে শেয়ার মূল্য সল্প সময়ের ব্যবধানে ২০ থেকে ২৫ টাকায় উঠবে। একইসাথে পুঁজিবাজারের নেতৃত্বদানকারী কোম্পানি হবে বলে মনে করেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ বিলিয়নের কোম্পানি করতে চাই।
উল্লেখ, পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসের শেয়ার লেনদেন বন্ধের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ১০১ দফা কোম্পানির লেনদেন বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হলো। ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন আরও ১৫ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে হিসেবে ২৮ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন বন্ধ থাকবে।
এর আগে সর্বশেষ ১০০ দফায় গত ১১ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির লেনদেন বন্ধ ছিল। এর আগে আরো ৯৬ দফা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। প্রথম দফায় ২০১৯ সালের ১৩ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এরপর ১৫ দিন পরপর কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে যাচ্ছে ডিএসই। তাতে এ কোম্পানিতে আটকে থাকা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। পিপলস লিজিং এর একটি। নানা কৌশলে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে গ্রাহকদের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে ২০২০ সালের শুরুতে খবর আসে। তাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে জারি করা হয় রেড নোটিস। পরে তিনি ভারতে গ্রেপ্তার হন। অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবতে থাকা পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
এএ