ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-০১-০৪ ২০:২১:৩৯
জনগণের ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই দীর্ঘ চলার পথে যতটুকু অর্জন, তার সবটুকুই আপনাদের অবদান। চলার পথে যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে আপনারা ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন–এটাই আমার আবেদন। আবার সরকার গঠন করতে পারলে, ভুলগুলো শোধরাবার সুযোগ পাব।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই কথা বলেছেন। ভাষণে তিনি আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেছেন এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। আমি বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে দুঃখ-বেদনাকে সম্বল করে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের মাঝে খুঁজে পেয়েছি- আমার বাবার স্নেহ, মায়ের মমতা এবং ভাইয়ের মায়া। আপনারাই আমার পরিবার, আমার ওপর ভরসা রাখুন। আসুন, সকলে মিলে এই বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণ করি।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ২০০৯ সাল থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ লীগ সরকার গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের পথে জাতিকে অগ্রসরমান রেখেছে। ইতোমধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার যে সুযোগ পাওয়া যাবে তা কার্যকর করা এবং যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে; তা একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মোকাবিলা করতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনুরোধ, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোন উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন যোগাবেন না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাস করি। এই নীতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে দেশ পরিচালনায় যে সাফল্য আমরা পেয়েছি তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সাল থেকে স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তোলার ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছি।
পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় এলে তার সরকার যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে তার মধ্যে ১২টি বিষয় উল্লেখ করেন তিনি। এগুলো হলো: সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার; দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় রাখার চেষ্টা; কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুব সমাজের কর্মসংস্থান; আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা; উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণ ও উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ; কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা; কর্মসংস্থানের জন্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অবকাঠামো এবং শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা; ব্যাংক বিমা ও আর্থিক খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি; নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা সুলভ করা; সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং সাম্প্রদায়িকতা ও সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা।
এএ