বিক্রিতে আয় কমেছে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার
::বীর সাহাবী: প্রকাশ: ২০২৪-০২-২০ ২১:৩৯:১২
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমেটেডের চলতি হিসাব বছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিক্রি বাবদ আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর নন-অপারেটিং খাত থেকে অর্জিত আয়ের সুবাদে ভালো করেছে। ফলে আলোচিত সময়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ ভালো মুনাফা করেছে। প্রতিষ্ঠান তিনটির সর্বশেষ প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে প্রথমার্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি কমেছে। তবে ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদহার ভালো পাওয়ায় তাদের নন-অপরেটিং খাত থেকে ভালো আয় এসেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে তথা জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন জ্বালানি তেল কোম্পানির সম্মিলিতভাবে বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৩০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানি তিনটির আয় হয়েছিল ৩২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত আয় কমেছে ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে সর্বশেষ সমাপ্ত ছয় মাসে আয় কমেছে ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। মূলত কোম্পানিগুলোর বিক্রি কমে যাওয়ায় আয়েও ভাটা পড়েছে।
পরিচালন খাত থেকে কোম্পানি তিনটির আয় চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কমলেও নন-অপারেটিং আয় বা মূলধনী আমানতের বিপরীতে ভালো মুনাফা হয়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানি তিনটির সমন্বিত নন-অপরেটিং আয় হয়েছে ৬৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৫৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে তিন কোম্পানির সমন্বিত অপরিচালন আয় বেড়েছে ১০৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন জ্বালানি তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫৫৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৫১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানি তিনটির নিট মুনাফা কমেছে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে সর্বশেষ সমাপ্ত ছয় মাসে মুনাফা কমেছে ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
কোম্পানি সূত্র মতে, অকটেন, পেট্রল, কেরোসিন, ডিজেল, এলওডি, ফার্নেস অয়েল, জেবিও, লুব অয়েল, এলপিজি ও বিটুমিনসহ নয়টি জ্বালানি কম-বেশি বিক্রি করে পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানি। এর বাইরে এলডিও, জেট এ-১, এসবিপি, এমটিটি, মেরিন ফুয়েল ও গ্রিজের বেশির ভাগই বিক্রি করে পদ্মা অয়েল কোম্পানি।
পদ্মা অয়েল: একক কোম্পানি হিসেবে আলোচিত তিন কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে পদ্মা অয়েল। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ১৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আলোচ্য প্রথমার্ধে কোম্পানির নন-অপারেটিং মুনাফা হয়েছে ১৭১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৬৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ সমাপ্ত ছয় মাসে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৫৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে নিট মুনাফা বেড়েছে ৪ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কোম্পানি সচিব আলী আবসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এ ব্যাপারে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
মেঘনা পেট্রোলিয়াম: চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আলোচ্য তিন কোম্পানির মধ্যে জ্বালানি বিক্রিতে কোম্পানিটির অবস্থান দ্বিতীয়। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির অপরিচালন আয় হয়েছে ২২৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৮০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৮৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৮৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ বিষয়ে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কোম্পানি সচিব রেজা মো. রিয়াজ উদ্দীন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে ডিএসইতে দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত ছয় মাসে তাদের বিক্রি কিছুটা কমায় গ্রস আর্নিংসও কমেছে। তা ছাড়া বাকিতে বিক্রি বৃদ্ধি, কর্মীদের বেতন বৃদ্ধিসহ কয়েকটি কারণে নগদ পরিচালন প্রবাহও কিছুটা কমলেও ভালো অপরিচালন আয়ের সুবাদে মুনাফা বেড়েছে।
যমুনা অয়েল: যমুনা অয়েল জ্বালানি তেল বিক্রিতে তিন কোম্পানির মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। কোম্পানিটি চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৭১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় কমেছে ৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির অপরিচালন আয় হয়েছে ২৭১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ কোম্পানিটি সর্বশেষ ছয় মাসে তিন কোম্পানির মধ্যে অপরিচালন আয় অর্জনে শীর্ষে রয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির অপরিচালন আয় হয়েছিল ২১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৬৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ হিসেবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়েছে ৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
যমুনা অয়েলের কোম্পানি সচিব মাসুদুল আলম বলেন, ‘চাহিদা কম থাকায় বিক্রি বাবদ আয় কমেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষ গাড়িতে কম চড়ছে তাই চাহিদা কমে গেছে। এতে করে বিক্রিও কমেছে।’
তেলের দাম বেশি কি বিক্রি আয়ে প্রভাব ফেলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তেমন বড় কোনো কারণ নয়। তেলের দাম তো আগে থেকেই বেশি ছিল। এখন চাহিদা কম হওয়াতেই বিক্রি কমেছে।’
এদিকে যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমানতে সুদ আয় ভালো পাওয়ায় আলোচ্য সময়ে তাদের অপরিচালন আয় বেড়েছে। যার সুবাদে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বাকিতে বিক্রি বাড়ায় তাদের নগদ প্রবাহ কিছুটা কমেছে।