বাংলাদেশি শ্রমিক প্রতারণায় কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা মালয়েশিয়ার
সানবিডি২৪ প্রকাশ: ২০২৪-০২-২৭ ১৪:২৪:১১
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ১০৪ বাংলাদেশি প্রতারিত করে আটকে রাখা হয় চেরাসের একটি বাসায়। এ ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে মালয়েশিয়ার প্রশাসন। সরকার থেকে জানানো হয়েছে, প্রতারণার সঙ্গে যে কম্পানি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল এবং মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম বলেছেন, চেরাসের উদ্ধারকৃত শ্রমিকদের কম্পানি কাজের ব্যবস্থা করতে পারেনি। পর্যাপ্ত খাবার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে কম্পানিটি।
সাইফুদ্দিন এবং সিম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে উভয় মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে মালয়েশিয়া সরকার। নিয়োগদাতাদের অবশ্যই তাদের শ্রমিকদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং দেশের আইন অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সুরক্ষা আদেশ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আনার আগে নথিভুক্ত করার জন্য পুত্রাজায়া অভিবাসন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সাইফুদ্দিন ও সিম একমত হন যে শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে রাখার জন্য ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩ এবং তাদের বেতন দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কর্মসংস্থান আইন ১৯৫৫-এর আওতায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রমিকদের ন্যূনতম আবাসন এবং সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হওয়া আইন ১৯৯০-এর অধীনে অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। শ্রমিকদের আটক রাখার জন্য পাচারবিরোধী এবং অভিবাসী আইন (আটিপসম) ২০০৭-এর অধীনে তদন্ত করা হবে। বিদেশি কর্মীদের জন্য তাদের অবশিষ্ট কোটা এবং তাদের অনুমোদনপত্র বাতিল করা ছাড়াও নিয়োগকর্তারা ভবিষ্যতে বিদেশি কর্মীদের জন্য আবেদন করা থেকে কালো তালিকাভুক্ত হবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এন্ডি হলের বরাত দিয়ে ফ্রি-মালয়েশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০০ জনের বেশি শ্রমিকের জন্য একটি টয়লেট দেওয়া হয়েছে এবং একটি কক্ষের মধ্যে গাদাগাদি করে তাদের থাকতে হচ্ছে। তাদের ভাত, ডাল ও আলুভর্তা খাওয়ানো হচ্ছে। এক কর্মী দাবি করেছেন, কাজের অবস্থা জানতে চাওয়ার পর চার দিন তাকে খাবার দেওয়া হয়নি।
এন্ডি হল বলছেন, প্রতিশ্রুত চাকরি পাওয়ার পরিবর্তে তাদের কোনো কাজ নেই, যার ফলে তাদের কোনো আয়ের সুযোগ নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে চরম অসুবিধার মধ্যে দিন যাপন করছেন ১০৪ জন বাংলাদেশি প্রবাসী।
২০২৩ সালের নভেম্বরে কাজের ভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার এত মাস কেটে গেলেও তাদের কাজের কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। আটক অবস্থায় অনেকটা বন্দি জীবন যাপন করছেন তারা।
বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকার নিয়ে দেশটিতে কাজ করা ব্রিটিশ শ্রম অধিকার কর্মী এন্ডি হল বলেছেন, ১০৪ কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ১৯ হাজার ৫০০ থেকে ২১ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত নিয়োগ ফি দিয়েছে তারা। তাদের ভালো জীবনযাত্রার সুবিধা ও উচ্চ বেতনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। চেরাসের একটি নির্মাণপ্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দিয়েছিল বলে জানান তিনি। শ্রমিকরা বলেছেন, নিয়োগের ফি দিতে গিয়ে তাদের ধার-দেনা করতে হয়েছে।
প্রতারণার শিকার এক কর্মী এন্ডি হলকে বলেছেন, ‘আমি বিশাল ঋণের মধ্যে পড়ে গেছি। বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা ধার করার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে বেতন পেয়ে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করব। কিন্তু এখন আমি পরিশোধ করতে পারছি না। ঋণদাতারা আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।’
কর্মীরা জানান, সেখানে যাওয়ার পর তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয় এবং তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এ ছাড়া তাদের যিনি বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করেন, তিনি তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছেন।
এনজে