পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে ঋণে জর্জরিত জুট স্পিনার্স

::বীর সাহাবী: আপডেট: ২০২৪-০৩-০৪ ১০:৪০:৫৬


বীর সাহাবী:পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত জুট স্পিনার্স লিমিটেড ঋণে জর্জরিত, নিয়োমিত লোকসান, দীর্ঘদিন লভ্যাংশ নেই ও কয়েক বছরের এজিএম হয়নি তার পরও পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে শেয়ারের দর। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ারের দর বেড়েছে ৭১ টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পুঁজিবাজারে নতুন ফ্যাশন হলো বন্ধ বা ঋণে জর্জরিত কোম্পানিকে টার্গেট করে এক ধরণের অসাধু বিনিয়োগকারীরা কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েন। শেয়ারের দর তুলে দেন আকাশে। এক সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফার আশায় সেই ফন্দিতে পা দিলেই হয়ে যান সর্বশান্ত। লোকসান করে পুঁজিবাজারকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে দেন বিভিন্ন মহলে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পুরো পুঁজিবাজার।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় পাট খাতের কোম্পানি জুট স্পিনার্স। শুরুতে ভালো ব্যবসা করে নিয়মিত লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। ২০১২ সালের পর থেকে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এর পেছনে বড় কারণ হলো মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ।

কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শামস-উল হকের মৃত্যু হয় ২০১০ সালে। এরপর থেকে তার ছেলেরা কারখানাসহ সম্পদের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। শামস-উল হকের মৃত্যুর প্রথম দুই বছর অর্থাৎ ২০১২ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে। এরপর থেকে ব্যাংকের ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমিক জটিলতায় লোকসানে নিমজ্জিত হয় কোম্পানিটি। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের জুন মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়াতো দূরের কথা কোম্পানি টিকেয়ে রাখাই হয়ে পড়ে বড় চ্যালঞ্জ।
কোম্পানির ঋণ:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮ কোটি ৯১ লাখ এবং স্বল্প মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং পুঞ্জীভূত লোকসান ২৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পৌনে ২ কোটি টাকার কোম্পানিটির দায় ৬৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এতো বিশাল দায় থাকা কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩১২ টাকা ৪০ পয়সা। যেখানে গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি শেয়ার দর ছিল ২৬৮ টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৭১ টাকা ৭০ পয়সা বা ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
কোম্পানিটি শেষ কবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল তার কোনো তথ্য ডিএসইতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২০১২ সালে সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছিল। কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করেছিল সেই ২০১৬ সালে অর্থাৎ প্রায় ৮ বছর আগে। এরপর আর কোনো সভা করতে পারেনি কোম্পানিটি।

লোকসানেই চলছে:ডিএসইর তথ্য মতে, ২০২৩ সালের জুনে সমাপ্ত বছরে জুট স্পিনার্স শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৮৩ টাকা ৭৮ পয়সা। এর আগের বছরে প্রতি শেয়ারে লোকসান দিয়েছিলো ৪৪ টাকা ৮৪ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান বেড়েছে ৩৮ টাক ৯৪ পয়সা।

জুট স্পিনার্সের লোকসান দেওয়া চলতি হিসাব বছরেও অব্যাহত রয়েছে। হিসাববছরের প্রথম দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১১ টাকা ৬৯ পয়সা। তবে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান সামান্য কমেছে। ২০২২ সালের একই সময়ে লোকসান ছিলো ২৪ টাকা ২১ পয়সা।

ডিএসইর সূত্র মতে, কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে কোম্পানি সচিব এটিএম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানার কার্যক্রম চালু আছে। সবকিছু চলছে ঠিকঠাক মতো। আর ব্যবসা করতে গেলে লোকসান হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) দিয়েছি।’

ডিএসইতে আপনাদের ওয়েবসাইটের কোনো তথ্য নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ওয়েবসাইট করার অনেক চেষ্টা করেছি তবে করতে পারিনি।’

ডিএসইতে কোম্পানির তথ্য বা ওয়েবসাইট না থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিএসইসি থেকে ওয়েবসাইটের ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপরও এখন পর্যন্ত যেসব কোম্পানি ওয়েবসাইটের তথ্য দেয়নি এগুলো সব খুঁজে বের করে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’