রমজানে প্রত্যেক মুসলিমের যে ৮ কাজ করা উচিত

::মুফতী মুহাম্মাদ রফীউদ্দীন আপডেট: ২০২৪-০৩-২৭ ১৭:৫১:০২


হযরত জিবরিল আ. রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরআন মাজিদ শোনাতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস ১৯০২) আমাদেরও রমজানে কিছু আমল করা উচিত, যেগুলোর জন্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন।

রোজা: রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। এটা এ মাসের বিশেষ আমল। সকল আদব রক্ষা করে পুরো মাস রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য।

তারাবি: রমজানের রাতের বিশেষ আমল হল কিয়ামে রমজান তথা বিশ রাকাত তারাবি। এ মাসের অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত লাভ করার জন্য এবং প্রতিশ্রুত সওয়াব ও পুরস্কার পাওয়ার জন্য তারাবি নামাজের ভূমিকা অনেক।

দান করা : দান-সদকা সর্বাবস্থাতেই উৎকৃষ্ট আমল, কিন্তু রমজানে এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। হাদিস শরিফে এসেছে-
كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَجْوَدَ النّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ.
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হস্ত আরো প্রসারিত হত। -সহিহ বুখারি, হাদিস ১৯০২

কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত: এ মাস কুরআন অবতরণের মাস। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আ.-এর সাথে রমজানের প্রত্যেক রাতে কুরআন মাজিদ দাওর করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে-
وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ القُرْآنَ.
হযরত জিবরিল আ. রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন মাজিদ শোনাতেন। -সহিহ বুখারি, হাদিস ১৯০২
অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত রমজানে অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা। অন্তত একবার হলেও কুরআন মাজিদ খতম করা। সালাফে সালেহীনের জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা এবং পরিবারের সদস্যগণ প্রত্যেকে রমজানে বহুবার কুরআন মাজিদ খতম করতেন।

নফল ইবাদত : এ মাসে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। এই সুযোগে অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। এ মাসে যে কোনো ইবাদত নিয়মিত করতে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না এবং পরবর্তীতে তা সহজেই অভ্যাসে পরিণত হয়। সুতরাং যিকির-আযকারের সঙ্গে অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করা উচিত। অন্তত বিভিন্ন সময়ের নফল নামাজগুলো আদায় করা যেমন- ইশরাক, চাশত, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি।
আফসোসের বিষয় এই যে, রমজানে সাহরীতে উঠলেই দু-চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ সহজেই পড়া যায়। বছরের অন্য দিনের মতো কষ্ট করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অমনোযোগী হওয়ার ফলে কিংবা সাহরীতে অতি ভোজনের কারণে তাহাজ্জুদ আদায়ের সুযোগ হয়ে ওঠে না।

দুআ করা : এ মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের মাস। তাই বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার শরণাপন্ন হয়ে কান্না-কাটি করে দুআ করা একান্ত কাম্য।
মাগফিরাত কামনা করা : যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও স্বীয় গুনাহসমূহ ক্ষমা করাতে পারল না তার উপর জিবরীল আ. ও দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। তাই জীবনের কৃত গুনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা মঞ্জুর করিয়ে নেওয়ার এটিই উত্তম সময়। বিশেষ করে ইফতার ও তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা চাওয়া এবং দুআ করা উচিত।

ই‘তিকাফ : শেষ দশকের মাসনূন ই‘তিকাফ অত্যন্ত ফযীলতের আমল। হাদিস শরিফে এসেছে-
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। -সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৭১; সহিহ বুখারি, হাদিস ২০৩৩

শবে কদর অন্বেষণ : ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করে সহস্র রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম রাত-লাইলাতুল কদর তালাশ করা কর্তব্য। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِیْ لَیْلَةِ الْقَدْرِ، وَ مَاۤ اَدْرٰىكَ مَا لَیْلَةُ الْقَدْرِ، لَیْلَةُ الْقَدْرِ خَیْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍ، تَنَزَّلُ الْمَلٰٓىِٕكَةُ وَ الرُّوْحُ فِیْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ اَمْرٍ، سَلٰمٌ، هِیَ حَتّٰی مَطْلَعِ الْفَجْرِ۠.
নিঃসন্দেহে কদরের রাতে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি। আর আপনি কি জানেন শবে কদর কী? শবে কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতা ও রূহুল কুদ্স (জিবরাঈল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে (পৃথিবীতে) অবতরণ করে। (এ রাতের) আগাগোড়া শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সুরা কদর)

এএ