হাদিসের আলোকে রাগ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

সানবিডি২৪ প্রকাশ: ২০২৪-০৫-৩১ ১৫:৫৩:২৮


মাওলানা হেদায়ত উল্লাহ

রাগ মানুষের স্বাভাবিক বিষয়। তবে রাগে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবীজিকে (সা.) বলল, ‘আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘রাগ করো না।’ সে ব্যক্তি কয়েকবার এ কথা বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবার বললেন, ‘রাগ করো না’ (বুখারি : ৬১১৬)। আল্লাহর রাসুল (সা.) সে সাহাবির ভেতরে রাগ থাকাটাকে মন্দ বলেননি, কিন্তু বলেছেন রাগ প্রকাশ না করতে। অর্থাৎ রাগ এলেও তা নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে ইসলামের সৌন্দর্য। বিভিন্ন হাদিসে জানা যায়, রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেও যেমন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন, তেমনি সাহাবিদেরও রাগ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিতেন।

এক. রাগের ভাব এলে অভিশপ্ত শয়তানের কথা মাথায় এনে আল্লাহর কাছে তার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা। হজরত সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রা.) বলেন, রাসুলের (সা.) সামনে দুজন লোক গালাগালি শুরু করল। আমরা তখন তার কাছে বসে আছি। একজন অন্যজনকে গালি দিচ্ছে। গালি শুনে অপরজনের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি এমন একটা বাক্য জানি যা কেউ বললে তার রাগ উপশম হবে। তা হলো, আউজুবিল্লাহি মিনাস শায়তানির রাজিম, অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ এক সাহাবি রাসুল (সা.) এর কথাটা শুনলেন। সে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে ঝগড়ারত ব্যক্তিকে রাসুল (সা.) এর কথাটা শুনিয়ে বললেন, ‘তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (তিরমিজি : ৩৪৫২)

দুই. শরীরের অবস্থা পরিবর্তন করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারও রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (আবু দাউদ : ৪৭৮৪)

তিন. ওজু করা। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয় পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন ওজু করে।’ (আবু দাউদ : ৪৭৮৬)

চার. চুপ হয়ে যাওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো, যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো, যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪৭৮৬)

পাঁচ. আল্লাহর ভয়ের কথা স্মরণ করা। হজরত আলী (রা.) এক যুদ্ধে অমুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধানকে সম্মুখযুদ্ধে ধরাশায়ী করলেন এবং যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন, তখন তিনি আলী (রা.)-এর মুখে থুথু নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আলী (রা.) লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলেন। তখন ওই সেনাপ্রধান বললেন, ‘আপনি আমাকে হত্যা করতে পারতেন, কিন্তু তা করলেন না কেন?’ উত্তরে আলী (রা.) বললেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। আপনার সঙ্গে আমি যুদ্ধ করেছি শুধু আপনার অবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহের কারণে। আমার মুখে থুথু নিক্ষেপের পর আমি যদি আপনাকে হত্যা করতাম, তবে তা হয়ে পড়ত আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহার বহিঃপ্রকাশ, যা আমি কখনোই চাই না’ (হায়াতুস সাহাবা)। একজন মুমিন ও মুসলমান হিসেবে আমাদের অবশ্যই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। আল্লাহ আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার তওফিক দান করুন।

এনজে