নিজের গলা কাটল জঙ্গি করিম!
প্রকাশ: ২০১৬-০৯-১১ ১০:২০:৩৭
সম্প্রতি চাপাতি দিয়ে মানুষ হত্যা করে কুখ্যাতি পাওয়া জঙ্গিদের একজন এবার নিজেই নিজের গলাকেটে আত্মঘাতী হয়েছে ।শনিবার রাতে রাজধানীর আজিমপুরে বিডিআর ২নং গেটের কাছে একটি জঙ্গি আস্তানায় এ ঘটনা ঘটে।
বিশেষায়িত টিম কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের অভিযানের সময় নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে ওই জঙ্গি আত্মহত্যা করে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম আবদুল করিম। সে নব্য জেএমবির মাস্টার মাইন্ড নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ।
ঘটনাস্থল থেকে মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবি’র কমান্ডার সাবেক সেনা কর্মকর্তা (মেজর) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহারসহ তিন নারী জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ।
এদের মধ্যে শারমিন ও রাহেলা নামে দুই জঙ্গি সদস্য নিজেদের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। জেবুন্নাহার পুলিশের গুলিতে আহত হয়।
এদিকে অভিযান চলাকালে ছুরিকাঘাত ও বোমার স্পিন্টারে আহত হয়েছেন পুলিশের পাঁচ সদস্য। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক )হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া রাত সাড়ে ১০টায় অভিযান শেষে পুলিশ ওই ফ্ল্যাট থেকে মেজর জাহিদের দুই সন্তান জুনায়েরা ও মারিয়মসহ তিন শিশুকে উদ্ধার করেছে। তাদের পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
ওই ফ্ল্যাট থেকে চারটি পিস্তল, শতাধিক রাউন্ড গুলি ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, মূলত মিরপুরের রূপনগরে অভিযানের পর থেকেই তারা পুরান ঢাকার এ আস্তানাটি খুঁজছিলেন। শনিবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ ২০৯/৫ লালবাগ রোডে ৬তলা ওই ভবনের (কাওছার মিয়ার বাড়ি) দ্বিতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়।
তিনি জানান, অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যরা বাড়ির দরজায় নক করা মাত্রই দরজা খুলে দুই নারী তাদের লক্ষ্য করে মরিচের গুঁড়ো ছোড়ে। এতে পুলিশের তিন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে সেলোয়ার-কামিজ পরা এক নারী এক হাতে ছুরি অপর হাতে পিস্তল নিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে।
ছানোয়ার হোসেন আরও জানান, ওই নারী বাধা পেয়ে পুলিশের দুই সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে। এসময় পুলিশ গুলি ছুড়লে ওই নারীও পাল্টা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয় সে।
তিনি জানান, পরে জানা যায় আহত ওই নারীর নাম জেবুন্নাহার। সে মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি নেতা মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মেজর মুরাদের স্ত্রী।
গুলির শব্দ পেয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে জঙ্গি সদস্যরা। পুলিশও ফ্ল্যাটটি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে।
এসময় আজিমপুরের ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বোমা ছুড়ে মারা হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
অভিযান শেষে ওই ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক পুরুষ ও দুই নারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক পুরুষ সদস্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন জানান, ওই পুরুষ সদস্যের নাম আবদুল করিম। ভাটারায় একটি আবাসিক এলাকায় জঙ্গিদের একটি বাড়ি ভাড়া করে দিয়েছিল আবদুল করিম। সে মূলত জঙ্গিদের রান্নাবান্নার বিষয়টি দেখভাল করত বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার দুই নারী জঙ্গি সদস্য শারমিন এবং শাহেলাও গলায় ধারালো অস্ত্র চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল। আহত তিন নারী জঙ্গিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মরিচের গুঁড়া ও ছুরিকাঘাতে আহত পাঁচ পুলিশ সদস্যকেও ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- লাভলু জামাল, রামচন্দ্র বিশ্বাস, শাজাহান আলী, মাহাতাব উদ্দিন ও জহির উদ্দিন।