এক সপ্তাহ পর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-০৭-২৫ ১৫:০৮:৩৪
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় এক সপ্তাহ পর সচল হয়েছে। বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৭ জুলাই থেকে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং সেবা ঠিকমতো পাচ্ছিলাম না। আর তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় পণ্য আমদানি বন্ধ ছিল। গতকাল বুধবার থেকে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সেবা পাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করতে পারছি। আমদানি পণ্য স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, সাধারণ ছুটি ও কারফিউর কারণে প্রায় এক সপ্তাহ পর বুধবার থেকে স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল হয়েছে। বুধবার থেকেই বন্দরটিতে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে। রপ্তানিকৃত গাড়ি বন্দর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে যাচ্ছে। এখন কোনো সমস্যা নেই।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট বন্ধ ও সরকারি ছুটি থাকার কারনে বুধবার থেকে চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, বুধবার বন্দরটিতে পণ্যবাহী ২৬৩টি গাড়ি প্রবেশ করেছে। আর রপ্তানি গাড়ি গেছে ১৭টি। এ সময়ের মধ্যে সরকারি ছুটি, কারফিউ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকলেও স্থলবন্দরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চলমান ছিল।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অমৃত অধিকারী বলেন, চলমান ঘটনায় আমাদের ইমিগ্রেশনে কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক ছিল। তবে আগের তুলনায় যাত্রী পারাপার কম ছিল।
বাংলাবান্ধা শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে চালু হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এরপর ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এ বন্দর দিয়ে ভারতে যাত্রী পারাপার শুরু হয়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে শুরু হয় পণ্য আমদানি-রপ্তানি। বন্দরটি চালুর পর থেকে রাজস্ব আয় করছে সরকার।
বর্তমানে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটিতে আমদানি পণ্যের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ পাথর আমদানি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মসুর ডাল, ভুট্টা, গম, খইল, আদা ও চিটাগুড়, রেললাইনের স্লিপার, প্লাস্টিক দানা, যন্ত্রপাতি, চিরতা, হাজমলা, আমদানি করা হয়। এ বন্দর দিয়ে ভারত ও নেপালে পাট, ওষুধ, প্রাণ ও ওয়ালটনের পণ্য, জুস, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
বন্দরটিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ৬৬ কোটি ১১ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই বন্দর থেকে ৬৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। এর পর প্রতি অর্থবছরই রাজস্ব আয় বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে রাজস্ব আয় করা বন্দরটিতে যেমনটি রয়েছে অপার সম্ভাবনা, তেমনি বন্ধ থাকলে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।
বিএইচ