ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমেছে দেশে, বেড়েছে বিদেশে

::মহিউদ্দিন রাব্বানি প্রকাশ: ২০২৪-০৮-১৩ ২১:০৫:১৭


দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমলেও বেড়েছে বিদেশে। চলতি বছরের জুন মাসে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। যা মে মাসে ছিল ২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডে দেশের অভ্যন্তরীণ সূচকে দেলদেন কমেছে ২৭ কোটি টাকা।

এদিকে দেশের বাইরে বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ডে মে মাসের চেয়ে জুন মাসে লেনদেন বেশি করেছেন। মে মাসে সব মিলিয়ে খরচ করেছেন ৪৫৬ কোটি টাকা, যা জুনে হয়েছে ৫২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুন মাসে ৬৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে।

তবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে আশার দিক হলো গত মে মাসের তুলনায় জুন মাসে বিদেশে নাগরিকরা দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন বেশি করেছেন। জুন মাসে ১৭৮ কোটি টাকা তারা ব্যয় করেছেন। অন্য দিকে মে মাসে ব্যয় করেছেন ১৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদেশি নাগরিকেরা দেশে ৯ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের মধে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি, খুচরা দোকানে ৩৫৬ কোটি, ইউটিলিটি বাবদ ২৪৩ কোটি, নগদ উত্তোলন ১৮৯ কোটি, কাপড় কেনায় ১৫৪ কোটি, ফার্মেসিতে ১২৯ কোটি, ফান্ড স্থানান্তর ৮৪২ কোটি, পরিবহনে ৮২০ কোটি, বিজনেস সার্ভিস ৫৬২ কোটি, প্রফেশনাল সার্ভিস ১৪৪ কোটি ও সরকারি সেবায় ১১৫ কোটি টাকা।

এছাড়া, দেশের ভেতর জুন মাসে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা, মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে খরচ হয়েছে ৪৬৩ কোটি টাকা, অ্যামেক্সের মাধ্যমে খরচ হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা, ডিনার্সের মাধ্যমে খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকা, কিউক্যাশ প্রোপ্রাইটরের মধ্যে খরচ হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, গত জুন মাসে বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করেছে ৫২৪ কোটি টাকা। যেটা মে ছিল ৪৫৬ কোটি টাকা।

বিদেশে খরচের মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে খরচ হয়েছে ১৫৭ কোটি, খুচরা দোকানে ৮৬ কোটি, নগদ উত্তোলন ২৫ কোটি টাকা, ফার্মেসিতে ৬৫ কোটি টাকা, কাপড় কেনায় ৪৫ কোটি টাকা, পরিবহনে ৪৯ কোটি টাকা, ব্যবসায় সেবা বাবদ ৪১ কোটি টাকা, সরকারি সেবায় ২১ কোটি টাকা, প্রফেশনাল সার্ভিস ১৭ কোটি টাকা ও ইউটিলিটি বাবদ ১৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছেন ভারতে ৯২ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্টে ৭৭ কোটি টাকা, সৌদিতে ৪৯ কোটি টাকা। এই দুই দেশের পর বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের বেশি ব্যবহার করেছেন থাইল্যান্ডে ৪৪ কোটি ও ইউএইতে ২১ কোটি টাকা। এছাড়া, যুক্তরাজ্যে ৩৫ কোটি, সিঙ্গাপুরে ৩৬ কোটি, কানাডায় ২৯ কোটি, মালয়েশিয়ায় ২২ কোটি, আয়ারল্যান্ডে ১২ কোটি, অস্ট্রলিয়ায় ১৪ কোটি ও অন্যান্য দেশে ৭৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করেছে ১৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্কিন নাগরিকরা খরচ করেছে ৪৫ কোটি টাকা, যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা খরচ করেছে ১৮ কোটি, ভারতের নাগরিকরা খরচ করেছে ২০ কোটি, অস্ট্রলিয়ানরা খরচ করেছে ৬ কোটি, কানাডার নাগরিকরা খরচ করেছে ৭ কোটি, সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা খরচ করেছে ৬ কোটি, জাপানিরা খরচ করেছে ৭ কোটি, ইউএই’র নাগরিকরা খরচ করেছে ৫ কোটি, চীনারা খরচ করেছে ৪ কোটি, সৌদি নাগরিকরা খরচ করেছে ৪ কোটি, ইটালির নাগরিকরা খরচ করেছে ৩ কোটি । অন্যান্য দেশের নাগরিকরা খরচ করেছে ৪১ কোটি টাকা।

স্থানীয় কার্ডধারীদের পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকেরাও মে মাসে ক্রেডিট কার্ডে কম খরচ করেছেন। এ দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকরা এপ্রিলে যেখানে খরচ করেন ১৯৯ কোটি টাকা, সেখানে মে মাসে করেন ১৭০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে বিদেশি নাগরিকেরা এ দেশে ক্রেডিট কার্ডে ২৯ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ কম খরচ করেছেন।

এক্ষেত্রে তারা ভিসার কাজে ১০৭ কোটি, মাস্টার কার্ডে ৬৭ কোটি খরচ করেছে।