উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অনুমোদন

প্রকাশ: ২০১৬-১০-১১ ১২:৩৭:৪৪


hasinaসরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৬ খসড়া করেছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। আইনে বলা হয়েছে, এই কাউন্সিলের সনদ ছাড়া এখন থেকে কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর উচ্চশিক্ষার সনদ দিতে পারবে না।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে এবং বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা দিতে এটা যুগান্তকারী আইন। এই কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারবে। এছাড়া তা বাতিল বা স্থগিতও করতে পারবে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করবে কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের নিয়ন্ত্রণও থাকবে এই কাউন্সিলের হাতে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন এমন একজন, যিনি শিক্ষার গুণগত মান সম্পর্কে অভিজ্ঞ; বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং ১০ বছর অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। কাউন্সিলে ১৩ সদস্য থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষাবিদ কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হবেন। বাকি আটজন খণ্ডকালীন।
তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে এর কার্যক্রম সম্পূর্ণ আলাদা হবে। এই কাউন্সিল শুধু শিক্ষার মান যাচাইয়ের বিষয়গুলোই দেখবে। তাছাড়া ইউজিসি’র আইনটিও অনেক পুরনো। এটিও সংশোধন করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার বেড়েছে
চলতি বছর তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গত বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৬ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮টি মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৬টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৬টি, বাস্তবায়নের হার ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
অপরদিকে গত বছরের একই সময়েও ১১টি মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ৭৮টি। এরমধ্যে ৪৫টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। বাস্তবায়নের হার ছিল ৫৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ৩৩টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিসভা বৈঠকে চারটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ১০টি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতি বা কর্মকৌশল অনুমোদিত হয়েছে ৩টি। চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে ৪টি। এ সময়ে সংসদে ৮টি আইন পাস হয়েছে ।
আইসিডিডিআর,বি আইন
মন্ত্রিসভা বৈঠকে আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র-বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) আইন-২০১৬ তে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই সংস্থাটি সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ ও ১৯৮৫ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে এতদিন পরিচালিত হতো। এই দুই অধ্যাদেশকে একত্রিত করে আইনে রূপান্তর করা হয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন সংশোধন আইন-২০১৬ এর খসড়াতেও চূড়ান্ত নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) রিসার্চ ল’
বাংলাদেশ পারমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে আরো গতিশীল ও সময়োপযোগী করতে মন্ত্রিসভা গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) রিসার্চ ল’-২০১৬’ অনুমোদন করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে বিনায় একটি উপদেষ্টা পরিষদ এবং একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হবে। উপদেষ্টা পরিষদ সময় মতো পরামর্শ এবং নীতিগত সহায়তা দিয়ে পরিচালনা পর্ষদকে দিক নির্দেশনা দেবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষিমন্ত্রী এই উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান হবেন এবং কৃষি সচিব সহ-সভাপতি হবেন। উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যরা হবেন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম-সচিবের নিচে নয়), পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং সরকার মনোনীত তিন ব্যক্তি। এদের মধ্যে একজনকে হতে হবে পরমাণু কৃষি অভিজ্ঞ, একজন অভিজ্ঞ কৃষক, অপরজন কোনো বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিনার মহাপরিচালক এই উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, বিনার মহাপরিচালক ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান থাকবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, মন্ত্রিসভা নাফ নদীর সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে উত্পাদনশীলতা সহায়তা উন্নয়ন বিষয়ে প্রস্তাবিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির খসড়াও অনুমোদন করেছে।