অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না: তারেক রহমান

আপডেট: ২০২৪-০৯-১৭ ১৯:৪০:০৮


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব কার্যক্রম পছন্দসই না হলেও তাদের ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এই সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সবার ব্যর্থতা। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তবে নিজেরা যেন নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হন, সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তারেক রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানে পালিয়ে যাওয়া মাফিয়া সরকার দেশের অর্থনীতিকে শুধু ধ্বংস করেনি। প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতাসহ দেশের আপামর জনতা বন্দুকের নলে বুক পেতে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছে স্বৈরাচারীর নিকট তারা মাথানত করতে জানে না। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ মাফিয়া শাসনতন্ত্র চালু করে দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। লুটপাট এবং টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীকরণ করে রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে। স্বৈরাচার পালানোর মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুবাতাস বইছে। স্বৈরাচার পালালেও স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা এখনো গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা আমাদের ব্যর্থতা, তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। জনগণের সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালাতে হবে। এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শুধু গণতন্ত্রই নয় দেশের সার্বভৌমত্বও রক্ষা পেয়েছে। কেউ যদি মনে করে আরো নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে তাও দোষের কিছু নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বীর ছাত্র-জনতা নারী শিশু কৃষক শ্রমিক সকল শ্রেণী পেশার মানুষ সর্বস্তরের জনগণ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের জনগণ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে রাজি তবুও স্বৈরশাসন মেনে নিতে রাজি নয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকামী বীর জনগণকে জানাই আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা।

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা শহীদি মৃত্যুবরন করেছেন, যারা আহত হয়েছেন, হাত পা চোখ হারিয়েছেন কিংবা চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজীবন তাদের এই আত্মত্যাগ এবং অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। হতাহতদের প্রতিটি পরিবারের প্রতি অবশ্যই রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি বলেন, লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র-রাজনীতি শাসন প্রশাসন হওয়ার কথা ছিল গভর্নমেন্ট অফ দ্যা পিপল বাই দ্যা পিপল ফর দ্যা পিপল। অথচ গত ১৫ বছর বাংলাদেশে মাফিয়া শাসন চালু করা হয়েছিল। বিদেশে পলাতক স্বৈরাচার বিনাভোটের সরকারের পরিচয় হয়ে উঠেছিল গভর্নমেন্ট অফ দ্যা মাফিয়া বাই দ্যা মাফিয়া ফর দ্যা মাফিয়া। এই মাফিয়া চক্র দেশকে সর্বক্ষেত্রে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। দেশকে সম্পূর্ণ আমদানি-নির্ভর, ঋণ-নির্ভর এবং পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। মাফিয়া চক্র দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করে দিয়েছে। গত দেড় দশকে দেশ থেকে ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার করে দিয়েছে।

তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে লাখো কোটি জনতার গণ অভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সকলের কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে কিন্ত এই সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সকলের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। দেশ-বিদেশ থেকে নানারকমের উস্কানিতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সে ব্যপারে তাদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে। তবে কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতাও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেটও হওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, এ জন্যই অগ্রাধিকারভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া দরকার। কারণ জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয়না। একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করে ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

তারেক রহমান বলেন, এবারের গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র অতীতের যে কোনো গণ-অভ্যুথানের চেয়ে ব্যতিক্রম। কেন ব্যতিক্রম? কারণ পলাতক স্বৈরাচারের অবৈধ শাসনকালে সকল গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকার হারিয়ে জনগণ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও হারাতে বসেছিল। তাই, এবারের গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে কেবল মানুষের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছে। দেশ এবংজনগণ এখন গুম খুন অপহরণ আর বিভীষিকাময় আয়নাঘরের।

এম জি