দলের চাহিদা পূরণই তাদের লক্ষ্য
প্রকাশ: ২০১৬-১০-১৮ ১২:৩১:৫৯
ফরেস্ট অফিসার হওয়ার স্বপ্ন মাটিচাপা দিয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে জীবন জড়িয়ে ফেলেছিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। প্রথমবার টেস্ট দলে ডাক পাওয়া ডানহাতি পেসারের টার্গেট বল হাতে অধিনায়ক, কোচের চাওয়া পূরণে পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করা।
বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের হাত ধরে উঠে এসেছেন খুলনার দুই তরুণ নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ঘরোয়া লিগ, ‘এ’ দল, আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচও খেলেছেন সোহান। হাল সময়ে দেশের সেরা উইকেটকিপারই বলা হয় তাকে। দলের চাহিদা অনুযায়ী খেলার চেষ্টাই প্রাধান্য পাচ্ছে সোহানের কাছে। অলরাউন্ডার মিরাজ তো চলতি বছরের শুরুতে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নেতৃত্বই দিয়েছিলেন। টেস্ট দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করার ইচ্ছা ছিল মিরাজের। অফ স্পিনার হিসেবে দলে আসা এই তরুণ চান ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়েও দলের জন্য অবদান রাখতে।
বরিশালের ছেলে রাব্বিও বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট খেলেই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে এসেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে গত কয়েক বছর নিজের সামর্থ্য প্রমাণও করেছেন। ৪৭ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ১০৩ উইকেট নেয়া রাব্বি যারপরনাই খুশি টেস্ট দলে আসতে পেরে। তিনি বলেন, ‘টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া একটা বড় ব্যাপার যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট দলে আসার। আলহামদুলিল্লাহ, আমারও ভালো লাগছে দলে সুযোগ পেয়েছি। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন আর আগের মতো নাই। এখন প্রত্যেকটা বল গুরুত্বপূর্ণ। ভালো খেলতে হবে। আমাদের ব্যাকআপ খেলোয়াড় অনেক। দলে প্রতিযোগিতাও তাই বেশি। ভালো করতে হবে। চাপ আছে, রিল্যাক্সও থাকতে হবে। মাঠে যেন ভালো করতে পারি সেটাই চেষ্টা করবো।’
দলে মাত্র দুজন পেসার। শফিউল ও রাব্বি। ম্যাচ খেলার প্রস্তুতি তাই দুজনকেই রাখতে হচ্ছে। নিজের মানসিক প্রস্তুতি সম্পর্কে ডানহাতি এই পেসার বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার আছে। তারা অনেক ম্যাচ খেলছে। তারা প্ল্যান দিবে, কোচ প্ল্যান দিবে। মূল বিষয় হচ্ছে, ভালো জায়গায় বল করলে দুনিয়ার সব ব্যাটসম্যানই সম্মান করে। আমার কাজ থাকবে ভালো জায়গায় প্ল্যান অনুযায়ী বল করা। অধিনায়ক, কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী বোলিং করা। উইকেট নিয়ে ভাবছি না। বোলিংয়ের জায়গাটা ঠিক করাই বড় বিষয় হবে।’
নিচু বাউন্স, ধীরগতির উইকেটই হবে সিরিজে বাংলাদেশের পরিকল্পনার মূল অংশ। ঠিক এই ধরনের উইকেটেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত রাব্বি। যা সাহস যোগাচ্ছে এই তরুণকে। তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে শুধু শীতের সময় আমরা পেসাররা ভালোভাবে বোলিংয়ের সুযোগ পাই। আমরা ৪০-৪৫টা উইকেটও পাই। তাছাড়া আমরা খুব গরমে খেলি। উইকেটগুলো একদিন পর নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের ঘরোয়া লিগেও ভালো খেলোয়াড়রা খেলে। ওখানে যে প্ল্যানে বোলিং করি, সেই প্ল্যানটা রাখতে হবে। তবে ওরা (ইংল্যান্ড) তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ওরা অনেক মানসম্পন্ন। খুব ভালো প্ল্যান করতে হবে। আমার নিজেরও প্ল্যান থাকবে। আমাদের এসব উইকেটে স্পিনারদের রোলটাই হয়তো বেশি। তারপরও আমরা দলে দুজন পেসার। আমাদেরও দায়িত্ব নিয়ে নিজের সেরাটা দিতে হবে।’
যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মিরাজ টেস্ট অভিষেকের স্বপ্নে বিভোর। সাদা পোশাকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গন্ডিতে পা রাখার ইচ্ছা তার। তিনি জানান, ‘আমি সব সময়ই চেয়েছিলাম টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করতে। সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। খেলার সুযোগ মিললে নিজের সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।’ ইংল্যান্ড দলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের আধিক্য বাংলাদেশের টেস্ট দলে অফ স্পিনারদের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়েছে। অফ স্পিনার হিসেবে মিরাজকে বেছে নিয়েছেন নির্বাচকরা। তবে সববিভাগেই নিজেকে মেলে ধরতে চেষ্টা করবেন এই তরুণ। তিনি বলেন, ‘আমি দলে এসেছি মূলত অফ স্পিনার হিসেবে। তবে দলের জন্য অবশ্যই ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়েও অবদান রাখতে চাইব।’
উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে সবশেষ টেস্টেও খেলেছিলেন লিটন কুমার দাস। তার ইনজুরিতে কপাল খুলেছে নুরুল হাসান সোহানের। অধিনায়ক মুশফিক গ্লাভস না ধরলে সোহান একাদশে থাকবেন। কিপিংয়ের দায়িত্বও থাকবে তার উপর। সেটাকে চাপ হিসেবে নিচ্ছেন না ২২ বছর বয়সী সোহান। তিনি বলেন, ‘চাপের কিছু নেই। এটা আসলে রেসপেক্টই বলা যায়। যে যার জায়গায় খেলবে এটাই আসলে।’ দলের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিং করতে চান সোহান। সুযোগ পেলে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই মেলে ধরার ইচ্ছা তার। তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ সুযোগ পেলে ওভাবেই খেলার চেষ্টা করবো। নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করবো।’