আলোকিত ঐতিহ্যের স্মারক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ: ২০১৬-১০-১৯ ১৫:২৬:০৬


JNUউচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে সরকারী জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা হয়। ২০০৫ সালের (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে পাসকৃত ২৮ নং আইনবলে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়।

এ দেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । তবে অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই এত অল্প সময়ে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্থান করে নিতে পারেনি। এই বিদ্যাপীঠ অল্প সময়েই ভর্তিচ্ছুদের প্রথম তাদিকের পছন্দের লিকায় নাম লিখিয়েছে। তাই প্রতিবছরই বাড়ছে ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা|বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেও স্নাতক সম্মান শেষেই চাকরির বাজারে রাখছে অভাবনীয় সাফল্য । বিসিএস পরীক্ষায়ও তাদের সাফল্যের হার ঈর্ষণীয়।

অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শূন্য থেকে পথচলা শুরু করেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে এক স্বর্ণজ্বোল ইতিহাস। ১৮৫৮ সালে পাঠশালার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল । তখন এর নাম ছিল ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়টি যেখানে অবস্থিত, সে জায়গাতেই এ পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বালিয়াটির জমিদার জগন্নাথ রায়চৌধুরী।

১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত হয়। এসময় এটিই ছিল ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অচিরেই ভারতের খ্যাতিমান বিদ্যাপীঠগুলোর মধ্যে  নিজের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। ১৮৮৭ সালে স্কুল ও কলেজ শাখাকে পৃথক করা হয়। তখন স্কুলের নাম হয় ‘কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল’। শিক্ষাক্ষেত্রে ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে ১৯২০ সালে ইন্ডিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ‘জগন্নাথ কলেজ আইন’ পাস করে।

কিন্তু ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে জগন্নাথ কলেজকে অবনমন করা হয়। ভারতীয় লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ‘জগন্নাথ কলেজ অ্যাক্ট’ পাস করে। এই আইনের ফলে এই বিদ্যাপীঠকে ‘জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ’ নামকরণ করা হয়।পুরানো ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয় এই প্রতিষ্ঠানে, তবে ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।

১৯৪৯ সালে এই বিদ্যাপীঠে আবার স্নাতক পর্যায়ে পাঠদান শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠন এনএসএফের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সংঘাতে বন্ধ হয়ে যায় জগন্নাথ কলেজ। ছয় মাস পরে যখন কলেজ খুলে তখন ডিগ্রি অংশকে ছাঁটাই করে নিয়ে যাওয়া হয় মহাখালীতে। নবীন এ কলেজের নাম দেয়া হয় ‘জিন্নাহ কলেজ’ (বর্তমান তিতুমীর কলেজ)। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল এই বিদ্যাপীঠ।

১৯৭২ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলীর বদান্যে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স খোলার অনুমতি পেয়েছিল। বাংলাদেশের অন্য অনেক কলেজের মতো এই কলেজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষ থেকে একে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।

এর পরের ইতিহাস প্রায় সবার জানা, ২০০৫ সালে মহান জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে এটি পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয় । বর্তমানে মোট ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩২ টি বিভাগ ও ২টি ইন্সিটিউটের মাধ্যমে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এগারতম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী (২০ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার । প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় মাতাতে আসছেন নগর বাউলখ্যাত জেমস ।

 অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। আর বিশেষঅতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া।

 দিনের শুরুতে সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তলনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন শুরু হবে। এরপর বেলুন ওপায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করা হবে। এরপর পর্যযায়ক্রমে র‌্যালি, আলোচনা সভা, নাটক, যাত্রাপালা এবং দুপুর ২ টায় কর্নসাটেরআয়োজন করা হবে।  আর এতে উপস্থিত থাকবেন বিখ্যাত সংগীত শিল্পী নগর বাউল জেমস।

সানবিডি/ঢাকা/জবি/ইসমাইল/এসএস