রাবি হল থেকে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

আপডেট: ২০১৬-১০-২০ ১৭:৪১:১৬


ru-students-photo-20-10-16রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নবাব আব্দুল লতিফ হলের ডাইনিং সংলগ্ন পেছনের নর্দমা থেকে এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে হল থেকে ওই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে প্রাথমিকভাবে হত্যাকা- বলে মনে করছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) আমীর জাফর।

মোতালেব হোসেন লিপু গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ২৫৩ নম্বর রুমে থাকতেন। লিপু ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু থানার মুকিমপুর গ্রামের বদরউদ্দিনের ছেলে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) আমীর জাফর বলেন, প্রাথমিকভাবে সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে তাকে খুন করা হয়েছে। ওর মাথায় বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে বিস্তারিত ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসবে।

লাশ উদ্ধার : হলের ডাইনিংয়ের রিনা নামের এক কর্মচারী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল আট টায় ঝাঁড়– দেওয়ার জন্য উত্তর দিকের গেটের তালা খুলে ডাইনিং এ ঢুকি। এ সময় ড্রেনের মধ্যে লুঙ্গি পড়া একটি ছেলের লাশ দেখি। এরপর হলের অন্য কর্মচারীদেরকে বিষয়টি অবহিত করি।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, হলের ডাইনিংয়ের পাশের নর্দমায় লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন হলের কর্মচারীরা। পরে তারা জানালে আমি ঘটনাটি পুলিশকে জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গেছে পুলিশ। আটক শিক্ষার্থীরা হলেন, নিহত ছাত্রের রুমমেট উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মনিরুল ইসলাম এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রদীপ কুমার বিশ্বাস।

লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলাম বলেন, রাত ১২টার দিকে ঘুমানোর জন্য তিনি রুমের লাইট বন্ধ করে দিতে বলেন। এতরপর ১২ টা ৪৫ পর্যন্ত টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়াশোনা শেষ করে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি রুমের দরজা খোলা। এরপর সবার চেঁচামেচি শুনে বাইরে গিয়ে দেখি আমার রুমমেটের লাশ পড়ে আছে।
সরেজমিন ঘটনাস্থল : হলের নিচতলায় ডাইনিংয়ের পাশের নর্দমায় লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। হলের উত্তর দিকের কর্মচারীদের যাতায়াতের গেটটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিলো। এছাড়া ডাইনিং এর ভেতর দিয়ে যেখানে লাশটি পড়ে আছে সেই রাস্তাও তালাবদ্ধ ছিলো বলে জানিয়েছেন হলের কর্মচারীরা। লাশ ড্রেনের কাদা পানিতে পড়ে ছিল। বাম হাতের কনুই মুখের পাশে ভাঁজ হয়ে ছিল। মাথায় আঘাতের চিহ্ন। পরণের লুঙ্গিটি অগোছালো অবস্থায় কাদায় মাখামাখি আর রক্তশূন্য মুখ। রাতে হলের ছাদে যাওয়ার গেটটি ছিলো তালাবদ্ধ। লাশ ওখানে কিভাবে পৌঁছালো তা এখনো রহস্যজনক।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট: নিহত শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। রামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. এনামুল হক বলেন, তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের কোন আঘাত নেই। তবে মাথায় গভীর আঘাত ও বুকের পাঁজরের হাঁড় ভেঙে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে হলের ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শরীরে কয়েক জায়গার চামড়া অল্প বিস্তর ছিলে গেছে।

জানাজা ও দাফন : রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পা-ে বলেন, ‘নিহত শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত শেষ হলে বিকেল চারটায় রাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি তারা রাজশাহীতে এসেছেন। জানাজা শেষে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।#

সানবিডি/রাবি/হৃদয়/এসএস