ভবনের জন্য বিনামূল্যে জমি চায় বিজিএমইএ

আপডেট: ২০১৬-১০-২৫ ১০:২১:০৮


bgmeaদেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী শিল্পের দোহাই দিয়েই বিজিএমইএ ভবনের জন্য বিনামূল্যে সরকারের কাছে জায়গা চাচ্ছেন পোশাক শিল্পের মালিকরা। একে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

ভবন বাঁচানোর আর কোনো উপায় যখন নেই বিজিএমইএ’র (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি), তখন নতুন জায়গার সন্ধানে মাঠে নেমেছেন সংগঠনটির নেতারা। বিজিএমইএ’র একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, সেই জমি বর্তমান ভবন ভাঙার ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারের কাছে বিনামূল্যেও দাবি করছে সংগঠনটি।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, উত্তরার নয় নম্বর সেক্টর ও আগারগাঁওয়ে জমি দেখেছে বিজিএমইএ। বিমানবন্দর ও বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি থেকে কাছে হওয়ায় মালিকদের বেশি পছন্দ উত্তরা এলাকা। এজন্য উত্তরা নয় নম্বর সেক্টরে প্রায় সাড়ে নয় কাঠার জমিটিকেই পছন্দ করেছে বিজিএমইএ।

এ জমি পেতে এখন সরকারের ওপর মহলে দৌঁড়-ঝাপ করছেন বিজিএমইএ’র নেতারা। ভবন ভাঙার ফলে মালিকরা বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে সরকারকে জানান তারা। তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে যেন  সরকার জমিটি বিনামূল্যে দিয়ে দেয়, তার জন্য আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে এখনো সরকারের কাছ থেকে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি বিজিএমইএ।

অন্যদিকে বর্তমান ভবনটি অবৈধভাবে তৈরি করে গত প্রায় ১০ বছর ধরে প্রচুর অর্থ আয় করেছে বিজিএমইএ, যে কারণে ক্ষতিপূরণ চাওয়া বা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. এম এ মতিন।

ড. এম এ মতিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কথা বলছেন গার্মেন্টস মালিকরা। আমরা বলছি, যেটি অবৈধভাবে তৈরি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কেন! কিন্তু যেহেতু পোশাক শিল্প দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী শিল্প, তাই তাদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া যেতে পারে’।

‘কিন্তু এ ভবন থেকে কম টাকা আয় করেনি বিজিএমইএ। ভবন থেকে গত ১০ বছরে কতো টাকা আয় হয়েছে, তাতে বিনিয়োগের টাকা উঠে এসেছে কি-না, তা সহজেই বোঝা যাবে। এ ভবনের প্রায় সব ফ্লোরই বিক্রি করা হয়েছে মোটা অংকের টাকায়। যেসব ফ্লোর ভাড়া দেওয়া আছে, তাতেও বিজিএমইএ’র আয় নেহায়েত কম না। সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কথা কেন আসবে? সবচেয়ে বড় কথা, অবৈধ কোনো জিনিসের জন্য ক্ষতিপূরণের কোনো যৌক্তিকতা নেই’।

তবে ভবন ভাঙার আদেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো হাতে না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা এখনো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাইনি। তা পাওয়ার আগে আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবো না’।

বিজিএমইএ ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রেখে গত ০২ জুন বিজিএমইএ’র আপিল খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

স্ব:প্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের রায়ে ২০১১ সালের ০৩ এপ্রিল আইন লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা ১৮তলা বিজিএমইএ ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের জমি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা ফেরত দিতেও বলেন হাইকোর্ট।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল বিজিএমইএ।

হাইকোর্টে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ জানিয়েছেন, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকায় ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে।