দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রামের কাঁচা বাজারের ক্রেতাদের
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-১০-১৮ ১৬:৪০:৩২
চট্টগ্রামে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। পাইকারি বাজারেই অধিকাংশ সবজি ৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে খুচরায় বরবটি, বেগুন, কাঁকরোল, গাজর কিনতে ক্রেতাকে ১শ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শরিফুল ইসলাম নামে একজন ক্ষোভের সুরে বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের মানুষ। সইতে পারি না, আবার বলতেও পারি না৷ আমাদের কপালে সুখ কোনো কালেই নাই। বাজারে এলে বোঝা যায়, আসলে মানুষ কেমন আছে। ৮০-১শ টাকার নিচে সবজি নেই-ভাবা যায়? কোন দেশে আছি আমরা?
নগরীর চাঁদগাও এলাকার বাসিন্দা রোমেল বলেন, ভোগ্যপণ্য বা কাঁচা বাজারে গেলেই এখন দুশ্চিন্তায় থাকি। সব ধরনের পণ্যের দামই চড়া। স্বস্তি ফেলা যাবে এমন কোনো পণ্য বাজারে এখন নেই। প্রতিনিয়ত আমাদের ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু আয় তো নির্দিষ্ট।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চিচিঙ্গা, শসা, কচুর মুখী, ঝিঙা, করলাসহ অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ থেকে ১শ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ ৮০ টাকার নিচে মিলছে না ‘ভালো’ কোনো সবজি।
চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী কাঁচা বাজারে ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ফুলকপি ২৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, বেগুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, শিম ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মুলা ১শ টাকা, ঝিঙা ১শ টাকা, করলা ১শ টাকা, টমেটো ২শ টাকা, কাঁচামরিচ ৩২০ থেকে ৪শ টাকা, গাজর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া, পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, বড় আলু ৫৫ টাকা, দেশি আলু ৭০ টাকা, দেশি আদা ১৮০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ থেকে ৩শ টাকা এবং রসুন ২শ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের আড়ত থেকে বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করছেন বেশি দামে। আর সম্প্রতি হওয়া বন্যার প্রভাবও পড়েছে সবজির দামের ওপর।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা মো. রফিক বলেন, আমরাতো পাইকারদের থেকে বেশি দামে কিনি ৷ আমরা কি কম বিক্রি করতে পারবো? আড়তে দাম বেশি রাখলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর সবজির আড়ত নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো ছাড়াও যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, মেহেরপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে সবজি আসে এই বাজারে। এছাড়া আশপাশের কয়েকটি উপজেলা থেকে আসা সবজির সরবরাহও স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটায়।
রিয়াজুদ্দিন বাজারের আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাতাকপি ৩০ থেকে ৪৮ টাকা, ফুলকপি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২৮ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, কচুর ছড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কদু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, তিতা করলা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, আলু ৪৫ টাকা এবং কাঁচামরিচ ২শ থেকে ২৫০ টাকা কেজিপ্রতি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে।
কর্ণফুলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি আঁটি লাল শাক ৫০ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, কুমড়া শাক ৩০ টাকা, কচু শাক ৩০ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা। এছাড়াও, কলার থোর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা এবং কচুর ফুল ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
শাক কিনতে আসা চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, মাছ-মাংসের পাশাপাশি শাক-সবজিও প্রয়োজন। তবে এখন মাছ-মাংসের চেয়েও শাক-সবজির দাম তুলনামূলক বেশি।
অন্যদিকে, কর্ণফুলী কাঁচা বাজারে কমদামি মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙ্গাস এবং তেলাপিয়াও বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। এছাড়া, পাবদা মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪শ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩শ টাকা, নারকেলি মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, লইট্ট্যা মাছ ২শ থেকে ২৫০ টাকা।
এছাড়া, বাগদা চিংড়ি আকারভেদে ৮শ থেকে ৯শ টাকা, গলদা চিংড়ি ছোট ১ হাজার, মাঝারি ১২শ এবং বড় ১৫শ টাকা। চাষের কই মাছ ২৮০ টাকা, ইলিশ মাছ আকারভেদে ১৩শ থেকে ১৮শ টাকা, কাতাল মাছ ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, আইড় মাছ ৮শ টাকা এবং শিং মাছ কেজিপ্রতি ৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সামুদ্রিক মাছ হিসেবে পরিচিত রুপচাঁদা মাছ আকারভেদে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা, লাল কোড়াল ৬শ থেকে ৭শ টাকা এবং কোড়াল ৫শ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে, সপ্তাহ ঘুরতেই পোলট্রি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা। বর্তমানে এই বাজারে পোলট্রি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২শ টাকায়। এছাড়া সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকা এবং দেশী মুরগি ৫শ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। আর পোল্ট্রি মুরগির ডিম ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা দরে ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে।
এছাড়া, গরুর মাংস হাড্ডি ছাড়া ৯৫০ টাকা এবং হাড্ডিসহ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাংস এবং বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই সপ্তাহে পোলট্রি মুরগি এবং গরুর মাংসের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী জানিয়েছেন, সম্প্রতি বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন চট্টগ্রামে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৩ টন) সবজি আসতো সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৫ ট্রাক আসে।
তিনি আরও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে সবজি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন দাম কমতে পারে। মূলত সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণেই দাম বেশি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মাছ, মাংসের কথা বাদই দিলাম। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, সবজি, ডাল খেয়ে বেঁচে থাকবে- সে পরিস্থিতিটাও বাজারে নেই। নানা অজুহাতে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কাজেই সরকারের উচিত, গুরুত্বের সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের বিষয়টি দেখা। যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ডিম, মুরগি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের বাজারে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। সবজির বাজারেও তদারকি বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি দরে বিক্রি করলে এবং মূল্য তালিকা না রাখলে জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব।
এম জি