গুলশানে হামলার অস্ত্র পশ্চিমবঙ্গে তৈরি

আপডেট: ২০১৬-১০-২৯ ১৮:২২:০৭


gulshan_terroristরাজধানীর গুলশানে গত ১ জুলাই যে হামলা হয় তাতে ব্যবহৃত রাইফেল পশ্চিমবঙ্গের মালদায় তৈরি। আর এটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন পাকিস্তানি অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। শনিবার ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে কলকাতা স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ছয় সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে একজন ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) গোয়েন্দাদের জানান, বাংলাদেশের গুলশান হামলায় জঙ্গিরা যে অস্ত্র ব্যবহার করে তা পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গে তৈরি।

উল্লেখ্য, ওই হামলায় ২০ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বিদেশি নাগরিক। পরে অভিযানে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত হয়।

এনআইএকে ওই সন্ত্রাসী জানান, বিহারের মানগার থেকে আগত অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের উপজাতীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারকরা গোপনে মালদা সফর করেন। সীমান্তবর্তী জেলা মালদার একটি ঘাঁটিতে একে-২২ তৈরি করা হয়। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে এসব অস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করা হয়।

এনআইএ কর্মকর্তাদের ধারণা, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী পাকিস্তানিরা দারা আদম খেল সম্প্রদায়ের লোক, যারা মূলত পেশোয়ার ও কোহাটের মধ্যবর্তী একটি গ্রামে বাস করেন। ওই সম্প্রদায়টি আধুনিক অস্ত্র প্রস্তুত ও চালনার ক্ষেত্রে তালেবানকে নিয়মিত সহায়তা দিয়ে থাকে।

এনআইএ এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে তারা (গ্রেপ্তারকৃতরা) যে ভাষার কথা উল্লেখ করছে তা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ ও এর আশপাশে বলা হয়ে থাকে, যেখানে ওই গ্রামটি অবস্থিত।’

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছে যে, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা দেশের বাইরে থেকে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন ইউনিট ‘কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম’ এর প্রধান মনিরুল ইসলাম এ সম্পর্কে স্পষ্ট করে ‘মানগার’ এর কথা বলেছেন। এরপর এ বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে বিহার পুলিশ।

এসটিএফের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিহার পুলিশ এক বিবৃতিতে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে নিশ্চিত করেছে যে, গুলশানে হামলার অস্ত্রগুলোর প্রস্তুতকারক ও পাচারকারীরা মালদা ও এর আশপাশের জেলায় তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছিল।’

এনআইএ বিশ্বাস করে যে, গুলশান হামলার এক মাস আগেই ঢাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে একে-২২ রাইফেল ও পিস্তলগুলো পৌছে যায়। তবে যে জিনিসটি এনআইএ কর্মকর্তাদের ভাবাচ্ছে সেটি হলো, জঙ্গিরা কেন একে-৪৭ এর পরিবর্তে একে-২২ রাইফেল ব্যবহার করলো। সাধারণত একে-৪৭ সন্ত্রাসী ও নিরাপত্তাবাহিনী উভয়ের কাছেই বেশি জনপ্রিয়। সেমি-অটোমেটিক রাইফেল একে-২২ সাধারণত রোমানিয়ায় তৈরি করা হয়। ভারতে এর ব্যবহার তেমন একটি নেই। তাই ভারতে এটি তৈরি করাও কঠিন।

এনআইএর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একে-২২ রাইফেল খুব একটা জটিল না। এটি স্বল্প দূরত্বের এবং অনভিজ্ঞরাও খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে। ঢাকার বেকারিতে যারা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল সেসব যুবকদের জন্য এ অস্ত্র ছিল উপযুক্ত।’

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি সত্যিই দারা আদম খেলের অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা মালদায় এসে অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে তবে বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। কারণ পাকিস্তানের এসব উপজাতি কলম-পিস্তল থেকে হ্যান্ড-গ্রেনেড, অটোমেটিক গ্রেনেড ও অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট গান পর্যন্ত যেকোনো অস্ত্রই অনুকরণ করে তৈরি করতে পারে। তারা মাত্র ১০ দিনে যেকোনো অস্ত্র দেখে সেটি তৈরি করতে পারে।