রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগে কী হচ্ছে

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-১০-২১ ১১:২৩:৩২


  • ব্যাংকের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা
  • সোনালীর এমডি পদে আলোচনায় বিনাভোটের ইউপি চেয়ারম্যান

একসাথে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৬ ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে (এমডি) অপসারণ করার এক মাস অতিবাহিত হলেও এগুলোতে নতুন এমডি নিয়োগ দিতে পারছে না অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ রাতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) এমডিদেরকে সরিয়ে দেয় সরকার। গত ১ মাস ধরে এমডি ছাড়াই চলছে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।

এদিকে এক মাসেও সরকারি ৬ ব্যাংকে এমডি নিয়োগ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ব্যাংক পাড়ায় চলছে নানা আলোচনা। এর আগে কখনো এভাবে একসাথে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৬ ব্যাংকের এমডি পদ এতদিন শূন্য থাকেনি। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ তাদের পছন্দের লোককে এমডি পদে বসানোর জন্য হস্তক্ষেপ করছে কি না এমন প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।

বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সোনালী ব্যাংকের এমডি পদে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের বিনাভোটের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর নাম আলোচনায় আসায় ব্যাংক পাড়ায় নানা কানাঘুষা শুরু হয়েছে। কারণ, নিজাম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন। সোনালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দু’এক দিনের মধ্যে তার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হতে পারে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী পদত্যাগে বাধ্য হন। আর ব্যাংকটির এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় আফজাল করীমকে। সোনালী ব্যাংকে সদ্য চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। তার বাড়িও চট্টগ্রামে।

নিজাম উদ্দীন ১৯৮৪ সালে সোনালী ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। মহাব্যবস্থাপক থেকে ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতির পর ২০১৯ সালে তাকে অগ্রণী ব্যাংকে পদায়ন করা হয়। ২০২০ সালের ১০ আগস্ট তিনি অবসরে যান।

নিজাম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের সবাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। টাকার জোরে অবসরের পরই তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরকারি ব্যাংকগুলোর এমডি নিয়োগের বিষয়ে কথা বললে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, এমডি নিয়োগ নিয়ে সরকার আসলে কী করতে চাচ্ছে-আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা বিভিন্নভাবে শুনতে পাচ্ছি কিছু প্রভাবশালীরা নাকি এখানে হস্তক্ষেপ করছে। তারা তাদের পছন্দের লোকদেরকে সরকারি ব্যাংকগুলোর এমডি পদে বসানোর চেষ্টা করছে। যদি এরকম হয় তাহলে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্বল হয়ে পড়া সরকারি ব্যাংকগুলো আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, কেউ যদি কোনো গ্রুপের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে এমডি হন তাহলে তাকে খুশি রাখতে অনিয়ম করতেও দ্বিধা করবেন না। বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ মূলত তাদের পছন্দের লোকদেরকে এমডি পদে বসায় কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ঋণ নেয়ার জন্য।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর এমডি নিয়োগ দিতে এতদিন লাগছে কেন? ব্যাংকগুলোর অবস্থা এমনিতেই ভাল না। এমডি না থাকায় সমস্যা আরও বাড়ছে। সরকারের উচিত ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম গতিশীল রাখতে দ্রুত এমডি নিয়োগ দেয়া।

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকের মধ্যে নাজুক অবস্থায় আছে বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক। বেসিক ব্যাংকের ৬৫ শতাংশ ঋণ এরই মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ৮ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। গত জুনে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক শতাংশ বা ৪৮ হাজার কোটি টাকায়। এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকটিতে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ২৫ হাজার কোটি টাকা, এস আলম গ্রুপের ঋণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকে গত জুনে শেষে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ বা ২১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণের প্রায় ১৫ শতাংশ খেলাপি, যা আগে হলমার্কসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে গেছে। বর্তমানে খেলাপির ঝুঁকি কমেছে সোনালীর। আর রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৩ শতাংশ বা ১০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা।

এএ