লাগাতার পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-১০-২১ ১১:২৯:০৩
মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর
- ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা
- শুধু এক কার্যদিবসই লেনদেন হয়েছিল হাজার কোটি টাকা
- শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জরিমানার রেকর্ড
দেশের শেয়ারবাজারে লাগাতার পতন চলছে। কোনো ভাবেই এ পতন থামছে। এতে প্রতিদিন পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। অব্যাহত পতনে ফুঁসে ওঠছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের মানি মার্কেটের অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে। রিজার্ভও ক্রমাগত বাড়ছে। তবুও কেন শেয়ারবাজারের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না তার কোনো সঠিক কারণ নেই। অনেকেই আবার কমিশনের সিদ্ধান্তগুলোকেও দোষারোপ করছেন।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর একে একে ধরা পড়তে থাকে তার সহযোগীরা। যারা দীর্ঘদিন শেয়ারবাজার নিয়ে কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছিল তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনে আশার সঞ্চার হয় এবার শেয়ারবাজার ভালো হবে। কিন্তু তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। শেখ হাসিনা পলায়নের আগের দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট ডিএসইর সূচক ছিল ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। এরপর শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিন ৬ আগস্ট এক ধাক্কায় সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪২৬ পয়েন্টে। এতে সূচক বাড়ে ১৯৭ পয়েন্ট। এতে বিনিয়োগকারীদের মনে বড় আশার সঞ্চার হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল-ইসলাম কার্যালয়ে আসেননি। এরপর বেশ কিছুদিন চেয়ারম্যান ছাড়াই চলে বিএসইসির কার্যক্রম। এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তি না থাকার পরও শেয়ারবাজার চলছিল উত্থানের মধ্য দিয়েই। গত ১১ আগস্ট ডিএসইর সূচক বেড়ে ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট দাঁড়ায়। সেদিন ডিএসইর লেনদেন দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়। সেদিন ডিএসইর লেনদেন হয় ২ হাজার ১০ কোটি টাকা। এরপর বেশ কয়েকদিন লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
তথ্য অনুযায়ী, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ গত ১৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জরিমানা করাসহ একসঙ্গে ২৮টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে ডিএসইকে নির্দেশ প্রদান করেন। এই পদক্ষেপগুলো নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়ে লাগাতার পতন হতে থাকে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
রাশেদ কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই লাগাতার পতন
খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে লাগাতার দরপতন হচ্ছে শেয়ারবাজারে। গত ১৮ আগস্ট ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্ট। এরপর দিন সূচক কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭১৫ পয়েন্ট। এরপর লাগাতার কমতে থাকে সূচক।
সবশেষ গতকাল সূচক কমতে কমতে দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬০ পয়েন্টে। সূচকের সঙ্গে তলানীতে নেমে যায় লেনদেনের পরিমাণও। গত ২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে হাজার কোটির ঘর স্পর্শ করতে পারেনি ডিএসইর লেনদেন। খরা নিয়েই চলছে লেনদেন। ফলে বিনিয়োগকারীরাও তাদের পুঁজি হারিয়ে এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।
বাজার পরিস্থিতি কেন উন্নতি হচ্ছে না
বিএসইসির চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর মধ্যে বেশ কয়েকটা বাজারের জন্য নেতিবাচক সিদ্ধান্তে রূপ নিয়েছে। হুট করে ২৮টি কোম্পানিকে জ্যাড ক্যাটেগরিতে পাঠিয়ে দেয়ার ফলে যেসব বিনিয়োগকারীরা এই কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে রেখেছিলেন তারাও বিপদে পড়ে যায়। যা বাজারে বড় একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসতেও বাধ্য হয়।
তবে কেউ কেউ বলছেন, শিবলী কমিশনের বিদায়ের পর বড় বিপাকে পড়ে যায় তার ছত্রছায়ায় থাকা গেম্বলাররা। যারা বিগত কমিশনের ছত্রছায়ায় থেকে শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছিল, কমিশনের বিদায়ের পর তারা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলার পাঁয়তারা করছে। তারা বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষেপিয়ে তুলে শেয়ারবাজারকে অস্থির করে রাখছে।
ইতিহাসের সর্বোচ্চ জরিমানা
গত ১ অক্টোবর রাশেদ মাকসুদ কমিশন শেয়ারবাজারের সব রেকর্ড ভেঙে জরিমানা করে। এদিন বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৭ লাখ টাকা জরিমানা করে।
জানা যায়, যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় তারা হলেন- মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি, ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে ৪ কোটি ১ লাখ, মুশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, জুপিটার বিজনেসকে ২২ কোটি ৫০ লাখ, এপোলে ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১ লাখ, এ আর টি ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি, আব্দুর রউফকে ৩১ কোটি, ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি টাকা।
মূলধন কত কমল
মাকসুদ কমিশন যেদিন দায়িত্ব গ্রহণ করে সেদিন ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে এই বাজার মূলধন কমতেই থাকে। সবশেষ গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকায়। এ হিসেবে মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা।
এএ