পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের গুরুত্ব: বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় বিকল্প
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-১০-২৬ ২০:৫৯:১৩
মুক্ত দেশে সকলেরই মুক্ত চিন্তার সুযোগ এসেছে। গত কয়েক বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ জনকে প্রতিদিনের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার অল্পকিছু সঞ্চয় করতে পারলেও সেই কষ্টার্জিত টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবে সেই ঘুর পাকে পরে আবার কেউ কেউ তার সব টুকুই হারিয়েছে।
আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে বিনিয়োগের জনপ্রিয় ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, জাতীয় সঞ্চয়পত্র কেনা, জমি ও স্বর্ণ কেনা, ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রাখা। বেশি সুদ পাওয়া যায় বলে সম্প্রতি ব্যাংকে আমানত রাখার ভির দেখা যায়। কিন্ত অর্থ সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর জন্য গ্রাহকের আমানত রাখা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। তহবিল টানতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য হয়ে সুদের হার বাড়াতে হয়েছে। এমতাবস্তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে সামগ্রিক ভাবে বিবেচনা করলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য মিউচুয়াল ফান্ড একটি অন্যতম জনপ্রিয় ও কার্যকরী পদ্ধতি।
কোন কোম্পানির শেয়ারে সরাসরি বিনিয়োগ করে অথবা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে সম্পদ সৃষ্টি করা হয়। সেই সম্পদ ব্যবহার করে যে কোন ব্যবসার বৃদ্ধি বা মূল্য সৃষ্টি করে থাকে। সরাসরি শেয়ারে বিনিয়োগ করার ব্যাপারটিতে তুলনামূলক ভাবে উচ্চ ঝুঁকি জড়িত আছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও সেক্টরের সম্পর্কে গবেষণা করে তবে স্টক বাছাই করতে হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের বিশাল তালিকা থেকে মাত্র কয়েকটিকে বেছে নেওয়ার কাজটি পাহাড় প্রমাণ। সেই কাজটি সম্পূর্ণ হলে, প্রতিটি স্টকের পারফর্ম্যান্সের দিকে নজর রাখতে হবে।
অপরপক্ষে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজাররা স্টক বাছাইয়ের কাজটি করে থাকেন। ফান্ডটির প্রতিটি স্টকের বদলে কেবল সামগ্রিকভাবে ঐ ফান্ডটির পারফর্ম্যান্সের প্রতি নজর রাখলেই হয় এবং মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের নমনীয়তা ও সরলতা রয়েছে যা শেয়ার বা স্টকে উপলব্ধ হয় না। মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ কারীরা বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে তাদের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন। এই লেখায় আমরা মিউচুয়াল ফান্ডের গুরুত্ব এবং কেন এটি বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করব।
এক. মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনায় পেশাদাররীত্ব রয়েছে
মিউচুয়াল ফান্ডের মূল সুবিধাগুলোর একটি হলো এর পেশাদার ব্যবস্থাপনা। একটি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করা হয়, যারা বাজারের বিভিন্ন পরিস্থিতি ও ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য পান।
দুই. এখানে ঝুঁকির বন্টন হয়ে থাকে
মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগের একটি বড় সুবিধা হলো ঝুঁকির বন্টন। একক শেয়ারে বিনিয়োগের তুলনায়, মিউচুয়াল ফান্ড বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে, যা ঝুঁকি হ্রাস করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত স্টক, বন্ড এবং অন্যান্য সম্পদের সংমিশ্রণ করে থাকে, ফলে একটি খারাপ পারফরম্যান্স অন্য একটি ভালো পারফরম্যান্স দ্বারা কমিয়ে দিতে পারে।
তিন. সহজ ও সরল বিনিয়োগের সুবিধা
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা খুবই সহজ। বিনিয়োগকারীরা মাত্র কিছু টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এটি নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা, কারণ তারা উচ্চ মূল্যের শেয়ার কেনার চেয়ে অল্প মূল্যে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন।
চার. তরলতা বা নগদায়ন সহজ
মিউচুয়াল ফান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর তরলতা। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তহবিল পেতে পারেন। ফলে, এটি একটি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের জন্যও একটি ভালো বিকল্প। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকৃত সম্পদকে তরল বা নগদের মাধ্যমে রূপান্তর করা যায়। অর্থাৎ সহজে ঋণগ্রহীতারা বাহ্যিক তহবিল পেতে পারে।
পাঁচ. মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বৈচিত্রতা রয়েছে
মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সেক্টরে এবং বিভিন্ন ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটি একটি বিনিয়োগ পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য করতে সাহায্য করে, যা বাজারের পরিবর্তনের প্রতি সুরক্ষিত রাখে।
ছয়. তথ্যের স্বচ্ছতা এবং অখণ্ডতা রয়েছে
মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত তাদের কর্মক্ষমতা ও সম্পদের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করে। বিনিয়োগকারীরা সহজেই তাদের বিনিয়োগের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং প্রয়োজনে তাদের বিনিয়োগ কৌশল পরিবর্তন করতে পারেন।
সার্বিক বিবেচনায় মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় বিকল্প, যা পেশাদার ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি বন্টন, সহজ প্রবেশাধিকার, তরলতা, বিনিয়োগের বৈচিত্র্য, এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও লাভজনক সুযোগ প্রদান করে। তাই, যারা বিনিয়োগের জগতে প্রবেশ করতে চান, তাদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড একটি চমৎকার পছন্দ হতে পারে। এখনই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার দিকে মনোযোগ দিন এবং আপনার ভবিষ্যতকে নিরাপদ করুন।
মোঃ আনিসুর রহমান (সজল)
অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল
সামরিক বিশ্লেষক ও সাহিত্যিক।