নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবি জাবি ছাত্রশিবিরের
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-১১-০৩ ১৫:২০:২১
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে ৪১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রোববার (৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) কনফারেন্স কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনার কথা জানান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
এসময় ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখার প্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন সাকির সঞ্চালনায় শাখা সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি ও সেক্রেটারি মুহিবুর রহমান মুহিব লিখিত প্রস্তাবনা পাঠ করেন।
তাদের উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো হলো- ১৬ জুলাইকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করা, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তন করে আন্দোলনে শহিদদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোর নামকরণ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উদার, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত নির্বাচনী আইন সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। আবাসিক হলে উন্নত ডাইনিং ব্যবস্থা চালু, নিরামিষভোজী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর খাবারের আয়োজন রাখা, পুরাতন সরঞ্জাম পরিবর্তন করে মানসম্মত রান্নাঘর গড়ে তোলা, কম খরচে পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেয়া এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য ‘ডাইনিং বয়’ পদ সৃষ্টি করা।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ছাত্রী হলগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং যানবাহনের শব্দের প্রভাব লাঘব করতে মহাসড়ক সংলগ্ন কক্ষগুলো সাউন্ডপ্রুফ করা, পোশাকের কারণে কোনো শিক্ষার্থী যেন শ্রেণিকক্ষে ও ক্যাম্পাসে শিক্ষক, সহপাঠী বা অন্যদের দ্বারা বুলিং বা বডি শেমিংয়ের শিকার না হন, এটা নিশ্চিত করার জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা। শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ পদ্ধতি অবিলম্বে বাতিল করে সিজিপিএর পাশাপাশি গবেষণা, দক্ষতা, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্ব ও নৈতিক মানদণ্ডকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে পোষ্য কোটা বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের চেকপয়েন্ট স্থাপন করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। র্যাগিং, বুলিং ও রেসিজম প্রতিরোধে ছাত্র শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে ক্যাম্পাসে সামাজিক নিরাপত্তা, সম্মান এবং সৌহাদ্যর্পূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ, চর্চা ও প্রসারের লক্ষ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্যোগে স্থায়ী ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গঠন করা।
প্রস্তাবনা পাঠ শেষে শিবিরের নেতারা বলেন, আমরা আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু, নিরাপদ এবং আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাওয়া, যেখানে সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ ও সম্মান থাকবে।
তারা আরও বলেন, আমাদের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ হবে নিরাপদ ও আনন্দময় এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হবে।
একইসাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রূপে গড়ে তুলতে প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে সকল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন তারা।
এর আগে, গত ২৯ অক্টোবর ক্যাম্পাসে সকল দলের অংশগ্রহণে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার কথা জানিয়ে প্রকাশ্যে আসে ছাত্র শিবির জাবি শাখার শীর্ষ তিন নেতা।
বিএইচ