আফ্রিকা থেকে সফলতা নিয়েই ফিরল ওয়ালটন

প্রকাশ: ২০১৬-১১-১৬ ১৬:৪৫:৩১


naijar-1নাইজেরিয়ার লাগোস আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলায় আফ্রিকাবাসীর মন কেড়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন পণ্য। ওয়ালটন পণ্যের গুনগত উচ্চমান এবং সাশ্রয়ী মূল্য আকৃষ্ট করেছে ক্রেতাদের। পাওয়া গেছে স্পট অর্ডার। অনেকেই ওয়ালটন পণ্যের পরিবেশক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে পাওয়া গেছে কয়েক লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের স্পট অর্ডার।

দশ-দিন ব্যাপী লাগোস আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা শেষ হয় ১৩ নভেম্বর। আফ্রিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ এই মেলায় বাংলাদেশে থেকে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশী ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। মেলায় প্রদর্শিত হয় ওয়ালটন ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, এলইডি টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ব্লেন্ডার, ইনডাকশন কুকার, এলইডি বাল্বসহ অন্যান্য হোম ও ইলেকট্রিক্যাল এ্যাপ্লায়েন্সেস।

আফ্রিকার বৃহৎ অর্থনীতির দেশ নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের তাফাওয়া বালিওয়া স্কয়ারে ৪০ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে চলতি মাসের ৪ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ’৩০তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৬’। বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো এই মেলায় অংশ নেয়। আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫লাখ ক্রেতা-দর্শণার্থীর সমাগম হয় সেখানে। মেলায় বাংলাদেশ থেকে একমাত্র অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন বিশাল জায়গা জুড়ে স্থাপন করেছিল সুদৃশ্য প্যাভিলিয়ন।

নাইজেরিয়াতে পণ্য রপ্তানি করতে হলে সে দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সনক্যাপ (স্ট্যান্ডার্ড অরগানাইজেশন অফ নাইজেরিয়া কনফরমিটি অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম) এর সনদ প্রয়োজন হয়। যা চলতি বছরের প্রথম দিকেই অর্জন করে ওয়ালটন। এবার আফ্রিকার বাজারে সরাসরি পণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ওয়ালটন অর্জন করলো আফ্রিকাবাসীর আস্থা। জায়গা করে নিয়েছে দেশটির বহুল প্রচারিত দৈনিক পাঞ্চ, ভ্যানগার্ড, গার্ডিয়ান, ডেইলি টাইমস, লিডারশীপসহ অন্যান্য সংবাদপত্রে। টিভি চ্যানেলগুলোতেও ব্যাপক আলোচিত হয়েছে ওয়ালটনের নাম।

ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ মেলা হিসেবে পরিচিত লাগোস আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ওয়ালটনের অংশগ্রহণ ফলপ্রসূ হয়েছে। ওয়ালটন পণ্যের উচ্চ গুণগতমান, সাশ্রয়ী মূল্য আফ্রিকাবাসীর প্রসংশা পেয়েছে। বিশেষ করে, ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার প্রযুক্তির ওয়ালটন ফ্রিজ মেলায় সাধারণ ক্রেতা, ব্যবসায়ী মহলে সাড়া ফেলেছে। এর মাধ্যমে ওয়ালটনের বাজার সম্প্রসারণ বেগবান হবে। নাইজেরিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা উজ্জীবীত করবে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের।

ওয়ালটনের আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগের প্রধান রকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ১৮ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ নাইজেরিয়া সম্ভাবনাময় এক বিশাল বাজার। বাংলাদেশের সমান আরেকটি বাজার রয়েছে সেখানে। এখান থেকে বেনিন, টোগো, ক্যামেরুন, ঘানা, চাঁদ, মালি, উগান্ডা ও বুরকিনা ফাসোতেও বাজার সম্প্রসারণ সহজ হবে।

জনসংখ্যা ও অর্থনীতির দিক থেকে আফ্রিকায় নাইজেরিয়ার অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে দেশটি এখন ‘লোয়ার মিডল ইনকাম’ এ পরিণত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্রুত অগ্রসরমান ’নেক্সট ইলেভেন’ কান্ট্রির তালিকায়ও রয়েছে দেশটি। ভৌগলিকভাবেও নাইজেরিয়া আফ্রিকার কেন্দ্রবিন্দুতে, আছে সমুদ্র বন্দর। এর প্রতিবেশী হিসেবে রয়েছে ক্যামেরুন, নাইজার, চাঁদ, মালি, ঘানা ইত্যাদি দেশ। এছাড়া আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিশর, সুদানসহ বেশকয়েকটি দেশের অবস্থান নাইজেরিয়ার কাছাকাছি। তাই নাইজেরিয়ার বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে পারলে ওইসব দেশগুলোতেও বাজার সম্প্রসারণ সহজ হবে।

মেলায় ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে এসে পণ্যের নিঁখুত ফিনিশিং এবং সাশ্রয়ী মূল্য দেখে নাইজেরিয়াতে ওয়ালটন পণ্যের পরিবেশক হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসায়ী ওসাজিই ক্রিস্টিয়ান আবুরিম। নাইজেরিয়ার ক্রেতা সোফিয়া বেজ ওয়ালটন পণ্যের ব্যাপক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ওয়ালটন ফ্রিজ ব্যবহার করছি। ওয়ালটনের অন্যান্য পণ্যও মানসম্পন্ন। আশা করছি খুব দ্রুতই আফ্রিকার ক্রেতাদের মন জয় করবে ওয়ালটন।’

নাইজেরিয়ায় ওয়ালটন পরিবেশক নুনে ডেভিড জানান, সেখানে প্রতিদিনই ওয়ালটন পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বাড়ছে। এরইমধ্যে, বেশ কিছু ব্যবসায়ী ওয়ালটনের সাব-ডিলার হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।