ভ্লাদিমির পুতিন কি সত্যিই মুসলিম উম্মার পাশে আছে ও থাকবে?

:::লেঃ কর্নেল(অবঃ)মোঃ আনিসুর রহমান (সজল ) আপডেট: ২০২৪-১১-২৮ ১১:১৪:৪৯


ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট, দীর্ঘ সময় ধরে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে পরিচিত। তাঁর নীতি এবং কার্যক্রমের মধ্যে মুসলিম উম্মার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। তবে, এই সম্পর্কের প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এটি কি সত্যিকারের সহযোগিতা, নাকি শুধুমাত্র স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা?

ভ্লাদিমির পুতিনের ইসলামিক বিশ্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সম্পর্ক একটি জটিল বিষয়। পুতিনের সরকার মুসলিম দেশের সাথে কিছু কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো, যেখানে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।

রাশিয়ার মুসলিম জনগণ, বিশেষ করে চেচেনিয়া ও তাতারস্তান, পুতিনের সরকারের সমর্থক। তিনি ইসলামিক বিশ্বের কিছু নেতার সাথে সম্পর্ক উন্নত করেছেন এবং ইসলামি দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তবে, পুতিনের মুসলিম উম্মাহর প্রতি প্রকৃত সমর্থন বা বন্ধুত্বের প্রশ্নে অনেকের মধ্যে সন্দেহ আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামরিক কারণে তার সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় নৈতিকতা বা ধর্মীয় সংহতির চেয়ে কৌশলগত সাফল্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প যার প্রভাব সর্বত্র কিছুটা অনুভূত ও প্রভাবিত হতে পারে।
সুতরাং, পুতিনের মুসলিম উম্মাহর সাথে সম্পর্ক একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য প্রেক্ষাপটে দেখা প্রয়োজন।

ইতিহাস ও পটভূমি: রাশিয়ার মুসলিম ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ যা শতাব্দী ধরে বিস্তৃত। প্রাথমিক ভাবে ৭ম শতকে ইসলাম রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে, বিশেষ করে ভলগা অঞ্চলে। ক্রিমিয়ার টাটার এবং বলগার মুসলিম সম্প্রদায়ের মাধ্যমে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৩শ শতকে মঙ্গোলদের আগমনের পর, ইসলাম আরও বিস্তৃত হয়। মঙ্গোলদের শাসনে মুসলিম সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একটি শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে।

১৫শ শতকের শুরুতে ক্রিমিয়ার তাতার খানের রাজত্বের অধীনে মুসলিম সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি শক্তিশালী হয়। এই সময়ে ইসলাম রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান ধর্ম হয়ে ওঠে। ১৬শ থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত রুশ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের সময় মুসলিম অঞ্চলের অধিকারী জনগণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এই সময়ে অনেক মুসলিম সম্প্রদায় রাশিয়ার অংশ হয়ে যায়।
১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর মুসলিম জনগণের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অধিকার কিছুটা সীমিত হয়। সোভিয়েত সরকারের সময় ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। তবে ১৯৮০-এর দশকে গ্লাসনস্তের সময়, ধর্মীয় স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার ঘটে এবং মুসলিম সম্প্রদায় পুনরায় সংগঠিত হয়। যাতে করে আজকের রাশিয়ায় মুসলিম জনগণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, বিশেষ করে চেচনিয়া, তাতারস্থান, বাশকোর্তোস্তান এবং অন্যান্য অঞ্চলে। মুসলিম সম্প্রদায়গুলি নিজেদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় চর্চা বজায় রাখতে কাজ করছে।

এই ইতিহাসে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে রাশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিচয়ে এবং তাদের অবস্থানে প্রভাব ফেলেছে। পুতিনের প্রশাসন ২০০০ সাল থেকে রাশিয়ার নেতৃত্বে রয়েছে এবং তার সময়ে রাশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। চেচেনিয়া, তাতারস্তান এবং বাশকোর্তোস্তানের মতো অঞ্চলে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ককে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়েছে। চেচেন নেতা রামজান কাদিরভের মাধ্যমে পুতিন চেচেনিয়ায় মুসলিম সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় পরিচয়ের প্রসারে সমর্থন দিয়েছেন।

কৌশলগত সম্পর্ক: পুতিনের সরকার মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, যেমন কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তান। এই দেশগুলো রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিক থেকে। চেচেন নেতা রামজান কাদিরভের মাধ্যমে পুতিন চেচেন মুসলিমদের সমর্থন পেয়েছেন। এই অঞ্চলে পুতিনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে কাদিরভের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ যা পুতিনকে মুসলিম উম্মাহর সহিত সামনে যেতে সাহায্য করেছে।
সিরিয়ায় পুতিনের সামরিক উপস্থিতি ইসলামিক দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করার মাধ্যমে পুতিন মুসলিম দেশে তার প্রভাব বাড়িয়েছে। পুতিনের মুসলিম উম্মাহর প্রতি সমর্থন বা সম্পর্ক মূলত কৌশল গত। তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের দিকে নজর দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, যা ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সংহতির চেয়ে বেশি প্রভাবিত। সুতরাং, পুতিনের মুসলিম উম্মাহর সাথে সম্পর্ক একটি কৌশল গত সম্পর্ক, যা ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে পারে এবং তার রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের উপর নির্ভরশীল।

রাজনৈতিক কৌশল: পুতিনের মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে সম্পর্ক মূলত রাজনৈতিক কৌশল হিসাবেই দেখা হয়। তিনি মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি করতে চান। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা, বিশেষ করে সিরিয়ার সংকটের সময়, রাশিয়ার মুসলিম রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পুতিন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও মুসলিম নেতাদের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে, তার কর্মকাণ্ডের প্রতি মুসলিম বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া রয়েছে, এবং অনেকেই তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান। তারপরও রাশিয়া মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় যাতে তারা পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব মোকাবেলা করতে পারে। মুসলিম উম্মার সমর্থন পেলে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক অবস্থানও শক্তিশালী হয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক: রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাসের বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে রাশিয়া তার নিজস্ব অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এই প্রসঙ্গে, মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক চুক্তি রাশিয়ার জন্য লাভজনক হতে পারে। অনেক মুসলিম দেশ রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রহী। এই ধরনের সহযোগিতা রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে থাকে। মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও রাশিয়ার আগ্রহ রয়েছে। এই দেশগুলোতে রাশিয়ার পণ্য এবং পরিষেবার চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিদ্যুত, জালানি শক্তি ও গ্যাস খাতে। রাশিয়া বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে নিজের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চায়। কারন এই মুহূর্তে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় যুক্ত রাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার প্রতি অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে।

রাশিয়ার ৬৫ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ ব্যবহারের অধিকারের উপর অবরোধ দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। সুইফট থেকে রাশিয়ার ১২টি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করা, ধনকুবেরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বিভিন্ন বৈশ্বিক কোম্পানির রাশিয়ায় সেবা ও বিক্রয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬৫ হাজার কোটি ডলার ব্যবহারের অধিঅধিকারে অবরোধ দেয়া।
ধর্মীয় সম্পর্ক

পুতিনের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টাটি মূলত রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সমঝোতা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চান, যা দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে।

এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণত ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, সামাজিক সংহতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া হয়। পুতিনের এই পদক্ষেপ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস এবং সমর্থন জাগাতে সক্ষম হতে পারে, যা রাশিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক এবং সামাজিক কৌশলের অংশ।পুতিনের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টাটি মূলত রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সমঝোতা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চান, যা দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে।

এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণত ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, সামাজিক সংহতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া হয়। পুতিনের এই পদক্ষেপ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস এবং সমর্থন জাগাতে সক্ষম হতে পারে, যা রাশিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক এবং সামাজিক কৌশলের অংশ।

সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা: পুতিন মুসলিম দেশগুলোর সাথে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য সহযোগিতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। ইসলামিক রাষ্ট্র ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা রাশিয়ার নিরাপত্তা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে সাহায্য করে।
সাংস্কৃতিক সম্পর্ক: পুতিনের সরকার মুসলিম জনগণের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করে। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেন। এই পদক্ষেপগুলো তাকে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জনে সাহায্য করে।

চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক: প্রায়শই পুতিনের মুসলিম উম্মাহর প্রতি সমর্থনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পুতিনের নীতিগুলো মূলত রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সত্যিকারের কল্যাণের জন্য নয়। এছাড়াও, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন ও দমন-পীড়নের ঘটনাগুলো এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, পুতিনের মুসলিম উম্মার প্রতি এই আগ্রহ মূলত স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা। মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং স্বাধীনতার অভাবের কারণে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অনেক সময় মুসলিম বিশ্বে সমালোচনার শিকার হয়। এই কারণে, কিছু মুসলিম দেশ রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপনকে তাদের স্বার্থের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে পারে।

ট্রামের জয়:যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচনে জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এর জয়ে মুসলিম উম্মাহর প্রতি পুতিনের মনোভাবের ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, তবে তা সরাসরি নয়। ট্রাম্পের প্রশাসন মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর নীতির জন্য পরিচিত ছিল, যা পুতিনের সাথে সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছিল। যদিও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে, তবে পুতিনের কৌশল সাধারণত তার নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের ওপর নির্ভর করে। মুসলিম উম্মাহর প্রতি তার মনোভাব পরিবর্তনের জন্য আরও অনেক ফ্যাক্টর কাজ করবে, যেমন আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সুতরাং, ট্রামের জয় মুসলিম উম্মাহর প্রতি পুতিনের মনোভাবকে পরিবর্তন করতে পারে, তবে তা একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করতে হবে।

সামগ্রীক ভাবে উপরের আলোচনা ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ দেখা যায় ভ্লাদিমির পুতিনের মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে সম্পর্ক একটি কৌশলগত এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে। পুতিনের সরকার মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে, বিশেষ করে সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের সাথে। যদিও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পুতিন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তবে এই সম্পর্কের গভীরতা ও স্থায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ। ভবিষ্যতে রাশিয়ার তথা পুতিনের মুসলিম নীতির প্রকৃতি এবং এর ফলাফল দেখতে হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ মুসলিম সম্প্রদায়ের অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। সুতরাং, বলা যায় যে পুতিনের মুসলিম উম্মাহর সাথে সম্পর্ক রাজনৈতিক কৌশল নির্ভরশীল এবং সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।

মোঃ আনিসুর রহমান (সজল)
অবসরপ্রাপ্ত লেঃকর্নেল
সামরিক বিশ্লেষক, লেখক ও সাহিত্যিক।