অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে: অর্থ উপদেষ্টা
আপডেট: ২০২৪-১১-৩০ ১৯:১৭:১৭
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, ১৫ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি তিন থেকে চার মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে অন্য সূচকগুলোও স্থিতিশীল হয় না। তবে ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে এবং আরও ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের পূর্বাভাস: প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন অর্থ উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বিশেষ অতিথি ছিলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। নির্ধারিত আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি আবদুল হাই সরকার, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী ও বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
অর্থনীতি স্থিতিশীল হওয়ার ইঙ্গিত জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ইতিবাচক সাড়া দিতে শুরু করেছে। গত মাসে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সভায় যোগ দিয়ে সবার কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। সরকারের বাজেট সহায়তা নয়; বরং বেসরকারি খাতই পাবে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এমন পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই, যাতে পরের সরকার এসে তা অনুসরণ করতে পারে। এটুকু বলা যায়, ভবিষ্যতে কেউ অর্থ পাচার করতে পারবে না। আর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ যেন না কমে, সেদিকে নজর দিচ্ছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর প্রশাসন ও কর সংগ্রহের জায়গাটা আলাদা করার কাজ চলছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংক থেকে ডিপোজিট নিয়ে চলে গেছে, এর দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। অন্তর্বর্তী সরকার সেটার উত্তরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে। মূল্যস্ফীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ, রিজার্ভ স্থিতিশীলতা ও সুদের হার সন্তোষজনক পর্যায়ের মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। তিনি জানান, এনবিআর নিয়ে বেসরকারি খাতের অভিযোগ রয়েছে। সব আইন ব্যবসাই সহায়ক হওয়া প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।
উপদেষ্টা জানান, এনবিআরের কার্যক্রমে অটোমেশন করার প্রক্রিয়া চলছে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ট্যাক্স পলিসি ও ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে আলাদা করার প্রক্রিয়া চলছে। বেসরকারি খাতে বিশেষ করে এসএমই খাতে ঋণ সহায়তা যেন কোনোভাবেই কমে না যায় সেটার প্রতি লক্ষ্য রাখাতে হবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের সাথে বেসরকারি খাতের সমন্বয় আবশ্যক এবং বিদ্যমান অবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে। একই পণ্যের একাধিক বাণিজ্য সংগঠন আছে। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
নিজেদের বাণিজ্যের উদারীকরণের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সাবসেক্টরগুলোর জন্য সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের ওপর তিনি জোরারোপ করে বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে সরকারি ব্যয় বাড়াবে, তাই আমাদের কর আহরণ বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করতে হবে, এর মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে।
বাণিজ্য সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বছরের শুরুতেই নীতি সুদহার এবং সুদহার ক্রমান্বয়ে হ্রাসকরণের পাশাপাশি সরকারি ব্যয় হ্রাস, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পণ্য ব্যবস্থাপনায় চাঁদাবাজি রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন।
মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মার্কিন ডলারে বিনিময়হার বাজারে বিদ্যমান হারের কাছাকাছি রাখার ওপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণের মাধ্যমে বিশেষ করে এসএমইদের তা নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যবসা প্রক্রিয়া সহজতরের লক্ষ্যে সামগ্রিক শুল্ক ব্যবস্থার সংস্কারের পাশাপাশি ব্যবসা নিবন্ধন ও নবায়ন প্রক্রিয়ায় অটোমেশনের দাবি জানান তিনি।
পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর জোরারোপ করে ডিসিসিআইর সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্তকরণের জন্য এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন নাহলে আমাদের পক্ষে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
এএ