ঢাকার ঘরের বাতাসে লুকিয়ে আছে মৃত্যু ঝুঁকি: গবেষণা

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-১২-০৩ ১২:১৮:৪৫


ঢাকা শহর কেবল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের একটি নয়, এর ঘরের ভেতরের বাতাসও হয়ে উঠছে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বাহ্যিক বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে আলোচনা থাকলেও, গৃহস্থালি বায়ু দূষণের ভয়াবহতা অনেকাংশেই উপেক্ষিত। সম্প্রতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেট্রিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকার ঘরের বাতাসে ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) নিজ বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। এ গবেষক দলে আরও রয়েছেন আফসানা ইয়াসমিন, ইমরান আহমেদ, মারিয়া হায়দার, মো কামাল হোসেন এবং মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেব।

“ইন্ডোর ইনভাইরনমেন্টস” জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় ঢাকার ৪৩টি গৃহে পিএম২.৫ দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। দেখা যায়, গড় দূষণ মাত্রা ৭৫.৬৯ মাইক্রোগ্রাম/মিটার³, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার তুলনায় অনেক বেশি। কিছু গৃহে এই মাত্রা ২০০ মাইক্রোগ্রাম/মিটার³ ছাড়িয়ে যায়।

প্রধান দূষণ উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাস্তায় চলাচলের সময় টায়ারের ঘর্ষণ থেকে উৎপন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, অপরিশোধিত তেলের ব্যবহারে এবং ল্যান্ডফিলে প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে নির্গত বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।
তাছাড়া, বাইরের দূষিত বায়ুর ঘরে প্রবেশ, রান্নার দীর্ঘ সময়কাল, অপর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন, ছোট আয়তনের ঘর ইত্যাদি। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অধিক ঝুঁকির মধ্যে, কারণ তাদের অধিকাংশ সময় ঘরের ভেতর কাটে।

সাধারণত মানুষ তার জীবনের ৬০-৬৫% সময় ঘরের ভেতরে কাটায়। তাই গৃহস্থালি বায়ু দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।” ড. সাখাওয়াত হোসেনের মতে, জানালা বন্ধ রেখে বাইরের দূষিত বায়ুর অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। হেপা ফিল্টারযুক্ত এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সক্ষম। রান্নার সময় ভেন্টিলেশন নিশ্চিত এবং পরিবেশবান্ধব চুলা ব্যবহার জরুরি।

তিনি আরো বলেন, নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং গৃহস্থালি দূষণের প্রভাব কমাতে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

গবেষক দলের আরেক সদস্য আফসানা ইয়াসমিন বলেন, “বাইরের বায়ু প্রবেশ রোধে এসি বা উন্নত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ব্যবহার এবং ঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।”

“স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার” (২০১৯) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৃহস্থালি বায়ু দূষণ বাংলাদেশে ৪র্থ বৃহত্তম মৃত্যুঝুঁকির কারণ। প্রতিবছর প্রায় ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে এই দূষণের কারণে।

গৃহস্থালি বায়ু দূষণ কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে একটি গুরুতর সমস্যা। সঠিক পদক্ষেপের অভাবে এটি এক নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণই হতে পারে এই সংকট উত্তরণের একমাত্র উপায়।

বিএইচ