রোমাঞ্চকর ম্যাচে ঢাকাকে হারাল খুলনা

প্রকাশ: ২০১৬-১১-১৯ ১৭:৪৭:২৮


bplsঅনেকটা নিষ্প্রাণ হতে চলা ম্যাচে প্রাণ ফিরে এনেছিলেন সেকুগে প্রসন্ন। শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার ঝোড়ো ফিফটি করে ঢাকাকে দারুণ এক জয় উপহার দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না ঢাকা। শেষ ওভারে গড়ানো রোমাঞ্চকর ম্যাচে ঢাকাকে ৯ রানে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটাইন্স।

শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৭ রান করে খুলনা। জবাবে ৫ বল বাকি থাকতে ১৪৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ঢাকা। পঞ্চম ম্যাচে চতুর্থ জয়ে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে এসেছে খুলনা। ষষ্ঠ ম্যাচে দ্বিতীয় হারে ঢাকা অবশ্য শীর্ষেই আছে।

১৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ঢাকার। ধারাবাহিকভাবে রান করা মেহেদী মারুফ এদিন দ্বিতীয় ওভারেই কেভন কুপারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন (৬)। গত বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কুমার সাঙ্গাকারা আবার ঢাকার সমর্থকদের হতাশ করেছেন। ৬ বলে মাত্র ২ রান করে মাহমুদউল্লাহকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লঙ্কান গ্রেট।

আগের তিন ম্যাচে ভালো করা নাসির হোসেনও এদিন ফ্লপ। কুপারের অফ স্টাম্পের বল কাট করতে গিয়ে শফিউলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি (৭)। এই ওভারের শেষ বলে ম্যাট কোলস ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে একটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু পরের ওভারে দারুণ এক গুড লেংথ বলে কোলসের স্টাম্প ভেঙে দেন শফিউল।  তখন ৩০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে ঢাকা।

পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধ গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন। বিশেষ করে মোসাদ্দেক চার-ছক্কা হাঁকিয়ে খুলনার বোলারদের দিশেহারা করে দিচ্ছিলেন। কিন্তু ৩৮ রানের এ জুটি ভাঙার পরই আবার পথ হারায় ঢাকা। প্রথমবার আক্রমণে এসে চতুর্থ বলেই সাকিবকে (৮) বোল্ড করেন মোশাররফ হোসেন রুবেল।

নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা ডোয়াইন ব্রাভো ফেরেন পরের ওভারেই। তইবুর রহমানের বলে জুয়াইদ খানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ব্রাভোর ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৪ রান। এক ওভার বাদে মোসাদ্দেকও আউট হয়ে যান। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে শুভাগতর হাতে ধরা পড়েন মোসাদ্দেক (২৮ বলে ৩৫)। তখন ঢাকার স্কোর ৭ উইকেটে ৮৩।

জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন ছিল ৬৫ রান। তবে ১৬তম ওভারে কুপারকে তিনটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান অনেকটা কমিয়ে আনেন প্রসন্ন। লং অফ দিয়ে দুটি ও ‘কাউ কর্নার’ দিয়ে মারা ছক্কাটি ছিল দেখার মতো। এই ওভার থেকে আসে মোট ২১ রান।

শফিউলের করা পরের ওভারে আরো একটি ছক্কা হাঁকান প্রসন্ন। শেষ বলে সানজামুল মারেন চার। শেষ তিন ওভারে ঢাকার প্রয়োজন পড়ে ৩২। তবে মোশাররফের করা ১৮তম ওভারের প্রথম দুই বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান আরো কমিয়ে আনেন প্রসন্ন। চতুর্থ বলে সানজামুল অবশ্য আউট হয়ে যান (১২)। পরের বলে ৩ রান নিয়ে ১৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন প্রসন্ন।

শেষ ১২ বলে ঢাকার প্রয়োজন ছিল ১৫ রান, হাতে ২ উইকেট।  কিন্তু জুনাইদের করা ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে রানআউটে কাটা পড়েন সোহরাওয়ার্দী শুভ। দারুণ বোলিংয়ে এই ওভার থেকে মাত্র ৫ রান খরচ করেন পাকিস্তানি পেসার।

শেষ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন ছিল ১০ রান। কিন্তু কুপারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অফে আরিফুল হকের হাতে ধরা পড়েন প্রসন্ন। ফলে বৃথা যায় তার ২২ বলে ৭ ছক্কায় খেলা ৫৩ রানের ইনিংস।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খুলনা টাইটান্স অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি তাদের। সাকিব আল হাসানের করা ইনিংসের চতুর্থ বলেই রানআউটে কাটা পড়েন হাসানুজ্জামান। সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন সানজামুল ইসলাম। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, হাসানুজ্জামানের ব্যাট ক্রিজের ভেতরে চলে গেলেও শূন্যে ভেসে ছিল!

আরেক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে সানজামুলের শেষ বলে নাসির হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এই ব্যাটসম্যান (১৬ বলে ২০)। খুলনার স্কোর তখন ৪ ওভারে ২ উইকেটে ২৩।

তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন শুভাগত হোম ও মাহমুদউল্লাহ। চারে নামা মাহমুদউল্লাহ শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। খুলনা অধিনায়ক ষষ্ঠ ওভারে সানজামুলকে লং অফ দিয়ে ও অষ্টম সেকুগে প্রসন্নকে ‘কাউ কর্নার’ দিকে হাঁকান দারুণ দুটি ছক্কা।

অন্য প্রান্তে শুভাগতও রানের চাকা সচল রেখে অধিনায়ককে ভালো সঙ্গ দিচ্ছিলেন। নবম ওভারে তিনি ডোয়াইন ব্রাভোকে ফাইন লেগ দিয়ে মারেন চার। কিন্তু পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান। ব্লকহোলে পড়া বলের লাইন মিস করেন শুভাগত (২০ বলে ২৪)। খুলনার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৬৭।

চতুর্থ উইকেটে দলকে ৯৬ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন নিকোলাস পুরাণ ও মাহমুদউল্লাহ। পুরাণকে ফিরিয়ে ২৯ রানের জুটিও ভাঙেন ব্রাভো। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে কুমার সাঙ্গাকারার গ্লাভসে জমা পড়ার আগে ১৬ বলে ১৬ করেন পুরাণ।

১৫তম ওভারে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে আউট হতে পারতেন মাহমুদউল্লাহও। কিন্তু পয়েন্টে ক্যাচ ফেলেন মোসাদ্দেক হোসেন। মোহাম্মদ শহীদের করা পরের ওভারে আবারও জীবন পান খুলনা অধিনায়ক। এবার ডিপ মিড উইকেটে তার ক্যাচ ফেলে ছক্কা বানিয়ে দেন সানজামুল।

সেই শহীদেরই পরের ওভারে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ। এই বিপিএলে এটাই তার প্রথম ফিফটি। শেষ ওভারে শহীদের বলেই আউট হন খুলনা অধিনায়ক। সুইপার কভারে ডাইভ দিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন ব্রাভো। ৪৪ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় মাহমুদউল্লাহ করেন ৬২। ২২ বলে ২১ করে অপরাজিত ছিলেন এই বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তইবুর রহমান।