তথ্য অধিকার মেলার আয়োজন: সচেতনতার নতুন দিগন্ত
জেলা প্রতিনিধি প্রকাশ: ২০২৪-১২-০৪ ১৩:৪৮:৪৫
তথ্যের গুরুত্ব ও এর প্রয়োগ নিয়ে গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। বাগেরহাটে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী তথ্য মেলা এই প্রেক্ষাপটে একটি সময়োপযোগী আয়োজন। “তথ্যের অধিকার, সুশাসনের হাতিয়ার-তথ্যই শক্তি, দুর্নীতি থেকে মুক্তি” এই স্লোগান শুধু একটি বাক্য নয়; এটি একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি, যা দেশের সুশাসন ও নাগরিক ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।
তথ্য মেলার উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম
তথ্য মেলার মূল লক্ষ্য ছিল তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর প্রয়োগ ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা। মেলায় ২৬টি সরকারি-বেসরকারি দপ্তর অংশগ্রহণ করে। দপ্তরগুলো তাদের সেবাসমূহের বিবরণ, সেবা পাওয়ার প্রক্রিয়া, এবং সেবামূল্য সম্পর্কে জনগণকে জানাতে প্রচারপত্র বিতরণ করেছে। এ ধরনের উদ্যোগ শুধুমাত্র তথ্য পাওয়ার অধিকারকেই কার্যকর করে না, বরং নাগরিকদের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেয়।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসানের বক্তব্য তথ্য মেলার গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে। তিনি বলেন, “তথ্য অধিকার আইনই একমাত্র আইন যা জনগণকে ক্ষমতায়ন করেছে।” তার আহ্বান ছিল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তথ্য সরবরাহে স্বচ্ছতা ও ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখে।
তথ্য অধিকার আইন: স্বচ্ছতার হাতিয়ার
২০০৯ সালে প্রণীত তথ্য অধিকার আইন বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনের ভিত্তি মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই আইনের মাধ্যমে যে কোনো নাগরিক সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে পেতে পারেন। এ আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
বাগেরহাটের এই মেলায় বক্তারা তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের কৌশল ও নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ধরনের মেলা নাগরিকদের মধ্যে তথ্য পাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে।
সুশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্যের ভূমিকা
তথ্য মেলার আরেকটি মূল বিষয় ছিল দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্যের ভূমিকা। দুর্নীতি একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। তথ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করলে দুর্নীতি কমে আসে। কারণ, জনগণ তখন প্রশাসনের প্রতিটি কাজ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং প্রয়োজনে জবাবদিহিতা দাবি করতে পারে।
বক্তারা সঠিকভাবে তথ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকারি কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষত জেলা প্রশাসকের এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ: “সরকারি দপ্তরের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার জন্য তথ্য অধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।”
তথ্য মেলার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বাগেরহাটের তথ্য মেলার মতো আয়োজন দেশের অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় করা গেলে তা সুশাসন ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
তথ্য অধিকার সম্পর্কে অসচেতনতা: অনেক নাগরিক এখনো জানেন না, তারা কীভাবে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। প্রশাসনিক জটিলতা: অনেক সময় সঠিক প্রক্রিয়ার অভাবে নাগরিকরা তথ্য পেতে হয়রানির শিকার হন। প্রযুক্তিগত দুর্বলতা: তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তার ঘাটতি এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
চূড়ান্ত কথা
বাগেরহাটে অনুষ্ঠিত তথ্য মেলা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়; এটি তথ্যের গুরুত্ব, নাগরিক ক্ষমতায়ন, এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এমন উদ্যোগ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। তথ্যকে হাতিয়ার করে জনগণ যদি নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়, তবে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তথ্য অধিকার আইন-২০০৯-এর যথাযথ প্রয়োগ এবং এ সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এ ধরনের আয়োজন আরও ব্যাপকভাবে করা প্রয়োজন। কারণ তথ্যই ক্ষমতা, আর এই ক্ষমতা তখনই অর্থবহ হবে যখন তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হবে।
এনজে