মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা আইভীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন না

প্রকাশ: ২০১৬-১১-২৩ ১১:৫৯:১৬


aibe-ivনারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী সাংসদসহ সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিতরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারছেন না। অপরদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দলের চেয়ারপার্সনসহ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে কারও বাধা নেই। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আচরণবিধিতে যে সংশোধনী আনা হয়েছে সেখানে সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিশেষ করে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিতরা প্রচার চালাতে পারবেন না। তবে তিনি যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হন তবে ভোট প্রদান করতে পারবেন।

আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনী প্রচার হবে দলীয় ভিত্তিতে। এ কারণে দলের সভাপতিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দলের প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারের অংশ নিতে পারবেন। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল হওয়ার কারণে তাদের কোন নেতা যারা সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন তারা প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। দলীয় নির্বাচনে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতাসহ দলের সংসদ সদস্যরা তাদের দলের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না আইন অনুযায়ী। কিন্তু এ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের বিরোধ দল বলে পরিচিত জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বিএনপি যেহেতু গত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি এবং সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নেই এ কারণে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে প্রচার চালাতে বাধা নেই।

নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়ররাও এ নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে দলীয় ভিত্তিতে সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি জারি হয়েছে। আচরণবিধিমালা যথাযথ পালনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নির্বাচনী প্রচারে ও সরকারী সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে তারা নির্বাচনী প্রচারে ও কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না উল্লেখ করেন।

ইতোমধ্যে এ নির্বাচনী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সবার দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের দিকে। বিএনপি অবশ্য দাবি করেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাদের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। এর জন্য তারা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীও এলাকায় দারুণ জনপ্রিয়। ফলে নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তবে নির্বাচন অবাধু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নির্ভর করছে কমিশনের কর্মকা-ের ওপর। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে দলীয় ভিত্তিক এ নির্বাচনে কেউ ইচ্ছো করলে মেয়র পদে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয়। দলীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের প্রত্যয়ন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৩০০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর তালিকা জমা দিতে হবে।

আচরণবিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে দল প্রতি পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করা যাবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি ভোটার থাকায় একজন মেয়র প্রার্থী ১৫ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন। এর সঙ্গে আরও ৭৫ হাজার টাকা ব্যক্তিগত ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে। কাউন্সিলর পদে ভোটার অনুপাতে এক লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থীরা।

এদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনেরও আচরণ বিধিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেও নির্বাচনী প্রচারের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নিতে পারবে না বলা হয়েছে। গত রবিবার দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সারাদেশে ৬১টি জেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ করা হবে ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনেও আচরণ বিধিমালায় নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অনুরূপ বিধিবিধান রাখা হয়েছে। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচন ভোট হবে নির্দলীয় বিধায় প্রার্থীকে দলের প্রত্যয়নে প্রয়োজন হবে না। এছাড়া এ নির্বাচনে যিনি প্রার্থী হবেন তিনি নিজের পক্ষে ভোট প্রদান করতে পারবেন না। তিনি স্থানীয় সরকার পরিষদের কোন স্তরের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে থাকতে পারবে না। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য পদে ভোট প্রদান করবেন।