প্রথমবারের মতো ব্রাজিলে হতে যাচ্ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ প্রদর্শনী’

আপডেট: ২০২৫-০১-০৮ ১৯:২১:৫৬


লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে বাংলাদেশি পণ্যের প্রচার, রপ্তানি বাজার প্রসার ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্রাজিল-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) চলতি বছরের ১৫-১৮ জুন দেশটির সাও পাওলোতে প্রথমবারের মতো ‘মেড ইন বাংলাদেশ প্রদর্শনী-২০২৫’ আয়োজন করতে যাচ্ছে।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় বারিধারা কূটনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত হোটেল অ্যাসকট প্যালেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য ‘মেড ইন বাংলাদেশ প্রদর্শনী-২০২৫’ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজারে প্রবেশ এবং তাদের ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী উন্নীত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশি প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এক্সপোতে স্টল দিয়ে অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য ব্রাজিলে ব্যবসায়িক জোট গড়ে তোলার পাশাপাশি সয়াবিন, চিনি এবং শিল্প যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমানের পণ্য অন্বেষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে এই এক্সপোর মাধ্যমে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন- বিবিসিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস, মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিবিসিসিআই-এর মহাসচিব মো. জয়নাল আবদিন, ব্রুনাই রাষ্ট্রদূত হাজী হারিস বিন ওসমান, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সাবেক সভাপতি মো. বশির আহমেদ, ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি জি এম চৌধুরীসহ ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অপরিসীম সম্ভাবনার উপর জোর প্রদান করেন।

তিনি বলেন, মেড ইন বাংলাদেশ প্রদর্শনী-২০২৫’ ব্রাজিল এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ ব্যবসাকে তাদের উৎকর্ষতা প্রদর্শন এবং অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি নিশ্চিত যে, এই অনুষ্ঠান পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি করবে এবং ভবিষ্যতে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে।

তিনি বলেন, অনেকদিন ধরে ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে গরুর মাংস আমদানির কথা থাকলেও আগের সরকারের সময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সার্টিফিকেশন না পাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমি বিগত সরকারের সময় এ বিষয়ে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে অনুমতি নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আসা কর্মকর্তারা বাংলায় নানান নীতিমালা দেন। শেষ পর্যন্ত গরুর মাংস আমদানির অনুমতি পাওয়া যায়নি।

মো. সাইফুল আলম বলেন, এই এক্সপো বিবিসিসিআই-এর অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন পথ খোলার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজারে প্রবেশ এবং তাদের ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী উন্নীত করার জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। আপনি যদি পোশাক শিল্পের একজন নেতা, পাটজাত পণ্যের, অথবা ওষুধ শিল্পের একজন অগ্রদূত হন, এই ইভেন্টটি আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আপনার প্রবেশদ্বার।”

তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের কাছে, এই এক্সপো নতুন বাজারে প্রবেশ এবং ব্যবসাকে বিশ্বমঞ্চে উন্নীত করার একটি সুবর্ণ সুযোগ। আমরা ব্যবসায়ীদের এই যুগান্তকারী অনুষ্ঠানে নিবন্ধন এবং অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

আপনি পোশাক শিল্পের একজন অগ্রণী ব্যক্তি, পাটজাত পণ্যের অগ্রদূত, অথবা ওষুধ শিল্পের একজন নেতা, যাই হোন না কেন, “মেড ইন বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৫” আপনার প্রবৃদ্ধির প্রবেশদ্বার। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য, ব্রাজিলের ব্যবসার সাথে জোট গড়ে তোলার এবং সয়াবিন, চিনি এবং শিল্প যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমানের পণ্য অন্বেষণ করার সুযোগ এটি।

বিবিসিসিআই’র মহাসচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ৩১ জানুয়াররি, ২০২৫ পর্যন্ত আগাম নিবন্ধন খোলা থাকবে, আকর্ষণীয় ছাড়ের সাথে। আমি ব্যবসায়ীদের সাও পাওলোতে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার এই সুযোগটি হাতছাড়া না করার জন্য অনুরোধ করছি। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে, এক্সপোকে সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, “২০২২ সালে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার হওয়ায়, তাৎপর্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা অনস্বীকার্য। এই এক্সপো ব্রাজিলের টেকসই লক্ষ্যের সাথে বাংলাদেশের পাট এবং বাংলাদেশের শিল্পায়নকে সমর্থনকারী ব্রাজিলীয় শিল্প সরঞ্জামের মতো সমন্বয় অন্বেষণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে”।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বাজারের বৈচিত্র আনা, বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা, শিল্প জুড়ে উদ্ভাবন এবং সহযোগিতা প্রচার করা। এই এক্সপোতে লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা (ই২ই) ম্যাচমেকিং, নীতি আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী থাকবে, যা বাণিজ্যের বাইরে গিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং প্রবৃদ্ধি জোরদার করার জন্য অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ব্রাজিল দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন লিওনার্দো ডি অলিভেইরা জানুজ্জি, কৃষি অ্যাটাশে, দূতাবাস সিলভিও লুইজ রদ্রিগেজ টেস্টাসেক্কা, ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএইচ