পুঁজিবাজারের অনিয়ম অনুসন্ধানে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠনের দাবি

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৫-০১-০৯ ১৯:৫৩:৪৯


পুঁজিবাজারে বিগত ১৫ বছরে কি কি অনিয়ম হয়েছে, জাল-জালিয়াতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ (কারণ উদ্ঘাটন) কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন স্টেকহোল্ডাররা।

বৃহস্প‌তিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর শাহবা‌গের ঢাকা ক্লাবে পুঁজিবাজারের বর্তমান প‌রি‌স্থি‌তি ও করণীয় বিষয়ক সংবাদ স‌ম্মেল‌নে এ দা‌বি জানানো হয়। দে‌শের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্স‌চেঞ্জ (ডিএসই) এই সংবাদ স‌ম্মেল‌নের আয়োজন ক‌রে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ডিএসই পরিচালক মেজর জেনারেল কামরুল ইসলাম (অব.), মো. শাকিল রিজভী, মো. শাহজাহান, রিচার্ড ডি রোজারিও, মিনহাজ মান্নান ইমন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন এবং ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, মার্কেটে যারা বিনিয়োগকারী আছেন, মার্কেটের যারা স্টেকহোল্ডার আছেন তাদেরকে এটা বলতে চাই ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ গত তিন মাস যেভাবে চলেছে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে এবং মার্কেটের কল্যাণে যেটা করা উচিৎ সে কাজগুলোই আমরা করছি। এবং ভবিষ্যৎ দিনগুলোতেও এর প্রতিফলনই পাবেন।

মার্কেটের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, এখানে ইক্যুইটি মার্কেটকে পার্সেন্টেজ অব জিডিপি হিসেবে দেখলে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে। আমরা যদি গত বছরের মার্কেট ইনডেক্সটা দেখি তাহলে দেখি যে, অমাদের পার্শ্ববর্তী দুইটি দেশে ইন্ডিয়া এবং শ্রীলঙ্কাতে ইনডেক্স ৮৫% এবং ৫০%বেড়েছে সেখানে অমাদের ইনডেক্স এর ১৬% দরপতন হয়েছে। একই সাথে আমরা যদি ডেইলি এভারেজ ট্রেড দেখি, সেখানেও দেখি গত ডিসেম্বর মাসে আমাদের অবস্থান শ্রীলঙ্কার থেকেও কম ছিল।

মার্কেটে ইন্টারমেডিয়ারির সংখ্যা বেশি এবং এর সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, অমাদের মার্কেটে যে ইন্টারমেডিয়ারি আছে তা সংখ্যায় অনেক বেশি। যেটা অমাদের মার্কেট সার্ভেইলেন্স বা মনিটরিংকে যেমন ব্যাহত করে আবার একই সাথে এতো সংখ্যক ইন্টারমেডিয়ারি আছে তাদের জন্য একটি ব্যবসায়িক পরিসর তৈরি করা সেটা ডিফিক্যাল্ট হয়ে যায়।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ভীষণভাবে সংকোচিত হয়েছে, আর্থিক খাতে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ। দীর্ঘদিন ধরে যে অনিয়ম অদক্ষতাকে আমরা লালন করেছি সেটাই পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক হতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, গত ১০ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের দুর্বল আইপিও বাজার এসেছে। ভালো কোম্পানি আসছে একেবারেই নগণ্য। বাজারে বিনিয়োগকারী সংখ্যা গত ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সক্রিয় বিনিয়োগকারী আরো অনেক কম।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা সক্ষম করতে না পারি তাহলে হয়তো আবারো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যাব। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম করতে হলে কিছুটা সময় আমাদের লাগবে। পুঁজিবাজার লিডিং এবং কোঅর্ডিনেশনের জায়গায়টা হোল্ড করবে। ডিএসইকে সামনে এগিয়ে নিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবল লাগবে। আমরা নেতৃত্ব গুণাবলী সম্পূর্ণ লোকবল নিয়োগ দিচ্ছি। আমরা আশা করছি বাজারে আস্থা আগের চাইতে ভালো হবে, বিনিয়োগকারীরা আবার ফিরে আসবে । আইটি সিকিউরিটি অডিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিএসই ওয়েব সাইটকে আমরা রিভাইব করছি। বিশেষ করে কিভাবে আইপিওটাকে ডিজিটালাইজড করা যায়। বন্ড মার্কেটও পরিচালনা সমস্যা, আমরা বিএসইসির সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।

মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করছি এবং ভবিষ্যতে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সে কাজও আমরা করছি। ইনসাইডার ট্রেড এবং ম্যানুপুলেশন কিভাবে রোধ করা যায় তা নিয়ে কাছ করছি। মার্কেট ডিভলমেন্টের ক্ষেত্রে রিসার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাজারে রিসার্চের মাত্রা খুবই কম এবং এটা কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ডিএসইর সুরক্ষা যদি আইনগত হয় তবে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবো। সিসিবিএল থাকবে এমনটা আমরা চাই না। বিএসইসি, ডিএসই, সিসিবিএল এ বিষয়ে সম্মানিত হবে কাজ করছে। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই দক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আমাদের কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে না। আমরা সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছি।

ডিবিএর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে যে পেশার গ্রুপগুলো হয়েছে। আমাদের দেশে সেগুলো পুরোপুরি কাজ করেছে, এমন কোন ভালো অতীত নেই। তবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার চাপের ফলে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। এটা বাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ডিএসই যদি প্রভাব মুক্ত থাকতে পারে, তাহলে পুঁজিবাজার ইতিবাচক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ১৫ বছরের অনিয়মের বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার। আপনাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে সকল অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে না। আপনারা সহযোগিতা করলে; অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের জন্য সহজ হয়। আপনারা তুলে নিয়ে আসুন, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

এএ