নববর্ষ উদযাপনে ইসলামি মূল্যবোধ

প্রকাশ: ২০১৭-০১-০১ ১১:৫১:০৪


new-yearনতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার উৎসব পালনের সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হলো প্রথম প্রথম ঘরোয়া পরিবেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নতুন বছরের প্রথম দিন সৌজন্যবোধ বিনিময়, ভালো খাবার-দাবারের আয়োজন, নতুন পোশাক গ্রহণের মধ্যেই বর্ষবরণ উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল।

বিশাল আকারে আয়োজন করে কখনো কোনো অনুষ্ঠান উদযাপন করা হতো না। সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঘটা করে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘বর্ষবরণ’ অনুষ্ঠান উদযাপন হয়।

ইসলামে ‘বর্ষবরণ’ উপলক্ষে কোনো রুসুম-রেওয়াজ বা আনন্দ অনুষ্ঠানের অনুমোদন নেই। হোক ইংরেজি, বাংলা কিংবা আরবি নববর্ষের বেলায়।

বর্তমান সময়ে উপমহাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ তথা নববর্ষ উদযাপন করা হয়।

এ সব আয়োজনের মধ্যে রয়েছে- আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, ফল খাওয়া, কাঁচ তথা তৈজশপত্র ছুঁড়ে মারা, যৌবন হারানো ও চুল-ভ্রু সাদা হওয়ার ভয়ে নির্ঘুম রজনী অতিবাহিত করাসহ ইত্যাদি নতুন নতুন আবিষ্কার। অথচ ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এ সবের কোনো ভিত্তি নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নতুন সূর্যকে স্বাগত জানাতে প্রত্যেক বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২ টা ০১ মিনিটে বর্ষবরণের নামে নববর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্যে  বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নাচ-গান, আতশবাজি, যুবক-যুবতির ফ্রি স্টাইলে ফুর্তিসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসব শুরু হয়।

যার ফলশ্রুতিতে ঘটে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ইসলাম এ সব অন্যায় ও যৌন উত্তেজনামূলক কোনো কর্মকাণ্ড এবং আতশবাজিসহ অপচয়মূলক কোনো বিষয়ই সমর্থন করে না।

ইসলামি মূল্যবোধে বর্ষবরণ
রাতের গুরুত্বপূর্ণ যে সময়টি পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে টগবগে যৌবনের লাগামছাড়া উন্মাদনা ও নেশা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নেয়া হয়। ইসলামে গভীর রাতের এ সময়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গভীর রাতের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে এসে আহ্বানকারীকে(সাহায্য প্রার্থীকে), অসুস্থ ব্যক্তিকে, ক্ষমাপ্রার্থীকে (চাহিদা অনুযায়ী) যা ইচ্ছা তা ডেকে ডেকে দিয়ে যান। (মুসলিম, মিশকাত)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, (যখন) ব্যক্তি ভোর অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, অথবা সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর অতিবাহিত করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য কিছুর বিনিময়ে।’ (মুসলিম)

এমন হলে কেমন হতো-
নতুন বছর উপলক্ষে বর্ষবরণের ইসলামি সংস্কৃতি এ রকম হওয়া উচিত ছিল যে, গভীর রজনীতে পুরনো বছরের বিদায় মুহূর্তে নতুন বছরের শুরুতে বিদায় নেয়া বছরের সব অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা।

নতুন বছরের আগত দিনগুলোতে সুন্দর ও সৎ জীবনযাপনের দৃপ্ত শপথে আল্লাহ তাআলার দয়া ও সাহায্য চাওয়া।

পরিতাপের বিষয়-
বর্তমান সময়ে ইসলামি আক্বিদা বিশ্বাসের মানুষরাও ভিন্নধর্মী সংস্কৃতির মানুষের আচার-আচরণে আকৃষ্ট হয়ে দ্বীন ও ঈমানের কথা ভুলে অপসংস্কৃতি ও অন্যায় কাজে নিজেদের আমলি জিন্দেগিকে করছে কুলষিত।

অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি কোনো মানুষ সে সময় লাভ করতে পারে, তবে আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের কোনো কল্যাণ চাইলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন। আর এ সময়টি প্রতি রাতেই রয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত)

অনুষ্ঠান যদি করতেই হয়-
বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ‘নববর্ষ’ যদি উদযাপন করতেই হয় তবে, ইসলামি আক্বিদা বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত মুসলমানের উচিত, রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে বিগত জীবনে ভুলত্রুটি থেকে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করা।

আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, কল্যাণের উদ্দেশ্যে ফল খাওয়া, কাঁচ তথা তৈজশপত্র ছুঁড়ে মারা, যৌবন হারানো ও চুল ভ্রু সাদা হয়ে যাওয়ার ভয়ে নির্ঘুম রজনী অতিবাহিত করাসহ বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, নগ্ন নারীর পুরুষসংমিশ্রণ ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকা। যা প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের জন্য আবশ্যক করণীয়।

পরিশেষে…
মুসলিম উম্মাহর প্রতি কুরআনের ছোট্ট একটি আয়াতের উদাত্ত আহবান করতে চাই। আর তা হলো- ‘আল্লাহ জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য, কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর আমল করতে পারে।’ (সুরা মুলক : আয়াত ২)

আসুন, নববর্ষ উদযাপনে বর্ষবরণের অশ্লীল ও অপচয়মূলক কাজ থেকে বিরত থেকে সুন্দর ও কল্যাণমূলক জীবন গঠনের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই।

বর্তমান সময়ের যাবতীয় ফেতনা, ঘোর মূর্খতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার পরিহার করে সঠিক পথ খুজে পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করি।

বিশেষ করে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে দ্বীনি ও ইসলামি আদর্শের বাস্তবায়নে সমাজ পরিবর্তনের সংস্কৃতি চালু করি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গভীর রজনীতে পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতি নিয়ে বিগত জীবনের গোনাহ এবং আগত নতুন বছরের কল্যাণ কামনা করার সংস্কৃতি চালু করার তাওফিক দান করুন। অন্যায় ও ফাহেশা কাজ থেকে হেফাজত করে কল্যাণের পথে এগিয়ে যাওয়া তাওফিক দান করুন। আমিন।