৫ লাখ না দিলে ক্রসফায়ার, ২ লাখ দিয়ে কারাগারে!

প্রকাশ: ২০১৭-০১-০৭ ১৯:০২:৪১


photo-1483791425বিদেশ যেতে পাসপোর্ট বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এক কলেজছাত্র। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই উল্লেখ করে প্রত্যয়নপত্রও দেন ঝালকাঠির রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস।

এই প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার দুদিন পর ওসি ওই কলেজছাত্রকে থানায় ডেকে এনে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। নইলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা দুই লাখ টাকা দিয়ে প্রাণভিক্ষা চান। পরদিন ওসি ওই ছাত্রকে একটি চুরির মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি করে আদালতে পাঠান। এর পর থেকে ঝালকাঠি কারাগারে ওই ছাত্র।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় ঝালকাঠি টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের পরিবার এ অভিযোগ করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ছাত্রের ছোট ভাই কামরুল হাসান মুরাদ।

মুরাদ অভিযোগ করেন, তাঁরা জেলার রাজাপুর উপজেলার জগাইরহাট এলাকার মৃত শাজাহান আলীর ছেলে। তাঁর বড় ভাই মোহাম্মদ ইমরান হোসেন আদনান স্থানীয় বড়ইয়া ডিগ্রি কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। বিদেশে যাওয়ার জন্য তাঁর বড় ভাই পাসপোর্ট বানানোর চেষ্টা করছিলেন। এ জন্য গত বছরের ৫ ডিসেম্বর তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই উল্লেখ করে প্রত্যয়নপত্র দেন রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস। এর দুদিন পর ৭ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে ওসি তাঁদের বাসা থেকে থানায় ডেকে পাঠান। তাঁরা দুই ভাই থানায় গেলে ওসি তাঁর বড় ভাই আদনানকে কোনো কারণ ছাড়াই আটকে রেখে বেধড়ক পেটান। মারতে মারতে ওসি জানান, পাঁচ লাখ টাকা দিলে আদনানের জীবন ভিক্ষা দেওয়া যাবে, অন্যথায় আদনানকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। মারধরের একপর্যায়ে আদনান অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে মুরাদ জানান, ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে তিনি দ্রুত বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের ঘটনা জানান। এরপর দুই লাখ টাকা এনে ওসিকে দেন। কিন্তু ওসি আরো তিন লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে আদনানের চেতনা ফিরলে তাঁর পূবালী ব্যাংক রাজাপুর শাখার (হিসাব নম্বর : ৭১৪০৪৫৫)  অনুকূলে একটি চেকের পাতায় টাকার অঙ্ক ফাঁকা রেখে স্বাক্ষর করিয়ে নেন ওসি। পরদিন ৮ ডিসেম্বর একটি চুরির মামলায় সন্ধিগ্ধ আসামি দেখিয়ে আদনানকে আদালতে সোপর্দ করে রাজাপুর থানার পুলিশ। আদালতের নির্দেশে আদনানকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তাঁর ভাই কারাগারে আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আদনান ও মুরাদের মা তাছলিমা বেগমও উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঝালকাঠির পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ওসি মুনীর উল গীয়াসের বিচার দাবি করেন।

কলেজছাত্রকে নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, আদনানকে আটক করার পর থেকেই সে অসুস্থ থাকার অভিনয় করেছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়নি, মারধরের প্রশ্নই আসে না। ঘটনার পর থেকেই তার পরিবার মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করছে বলেও দাবি করেন তিনি।