বস্তাপ্রতি ৬০০ টাকা দাম কমলেও প্যাকেটে সামান্য
প্রকাশ: ২০১৭-০১-১০ ১০:৪১:৪৫
দেড় মাসের ব্যবধানে আয়োডিনযুক্ত সাদা লবণের দাম বস্তাপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা কমলেও প্যাকেটে কমেছে সামান্য। এজন্য প্যাকেটজাত লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া মুনাফাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত এক-দেড় মাসে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা দাম কমেছে।
কক্সবাজারের লবণচাষীরা জানান, কৃষক পর্যায়ে বর্তমানে ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৩ টাকা ৫১ পয়সা। দেড় মাস আগে একই লবণ বস্তাপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ২০ টাকা ২৭ পয়সা থেকে ২১ টাকা ৬২ পয়সা। অর্থাৎ এ সময়ের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি দাম কমেছে ৫০০-৬০০ টাকা এবং কেজিপ্রতি ৬ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ৮ টাকা ১১ পয়সা।
আর অটোমিলাররা আয়োডিনযুক্ত যে লবণ বাজারজাত করছেন, তা বর্তমানে প্রতি কেজি ৩৫-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই লবণে কেজিতে অতিরিক্ত মুনাফা নেয়া হচ্ছে ২১ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে ২৪ টাকা ৪৯ পয়সা। প্যাকেট খরচ ২-৩ টাকা ধরা হলেও অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন অটোমিলাররা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা এবং খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩৮ টাকায়। একই তথ্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) দিয়েছে।
কক্সবাজারের লবণচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস আগেও তাদের বাজারে প্রতি ৪০ কেজি পলিথিন লবণের দাম ছিল ৬০০-৬৫০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৫ টাকা থেকে ১৬ টাকা ২৫ পয়সা। বর্তমানে তা ৩৮০-৪০০ টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা। প্রতি একর জমিতে শুধু পলিথিন খরচ রয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ইজারা ও শ্রমিক খরচ ধরা হলে একরপ্রতি সর্বমোট খরচ পড়ে ১ লাখ ৪০ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি একরে লবণ উৎপাদন হয় ৭০০-৮০০ মণ। তবে আবহাওয়া খারাপ হলে উৎপাদন অনেক
কমে যায়।
এ সম্পর্কে কক্সবাজার লবণচাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস বণিক বার্তাকে বলেন, গত বছর লবণের দাম ভালো হওয়ায় চাষীরা চড়া দামে জমি ইজারা নিয়েছেন। গত বছর প্রতি একর জমি ইজারা নিয়েছিলেন ২০ হাজার টকায়। এ বছর দ্বিগুণের বেশি দামে তা ইজারা নিয়েছেন। লবণের দাম আরো কমে গেলে কৃষককে লোকসান গুনতে হবে। তিনি জানান, তাদের এলাকায় আয়োডিনযুক্ত ও লবণের কাঁচামাল দুটিরই দাম যেহেতু কমেছে, তাই প্যাকেটজাত লবণে দাম কমানো উচিত।
এসিআই ও মোল্লা সল্টের পরিবেশক মৌলভীবাজারের বিল্লাল হোসেন জানান,
লবণের দাম কিছুটা কমেছে। আগে যে লবণ ৩৮-৪০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা ৩৫-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ ২ থেকে আড়াই টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। দাম আরো কমবে বলে আশা করছেন তিনি।
বর্তমানে বাজারে প্যাকেটজাত লবণ উৎপাদন করছে এমন উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এসিআই সল্ট লিমিটেড, ইউনাইটেড সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, পূবালী ভ্যাকুয়াম ইভ্যাপোরেটড সল্ট প্লান্ট, ডায়না ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড ও মোল্লা সল্ট (ট্রিপল রিফাইন্ড) ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ক্রিস্টাল, মধুমতি, মুসকানসহ আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। দেশে লবণ বাজারজাত হচ্ছে ভ্যাকুয়াম, মেকানিক্যাল ও সনাতন এ তিন পন্থায় পরিশোধন হয়ে। ভ্যাকুয়াম, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত হয় ৬০ শতাংশ লবণ। এ দুই পন্থায় বাজারজাত হওয়া লবণের বাজারে ৮০ শতাংশ দখল আছে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৩০টি। আর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর হাত ধরেই অস্বাভাবিক মূল্যে বাজারজাত হচ্ছে লবণ। সূত্র: বনিকবার্তা
সানবিডি/ঢাকা/এসএস