ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিবর্তন : কর্মীদের করণীয়
আপডেট: ২০১৭-০১-১২ ১৭:৪৮:২৪
একটি বড় রকমের পরিবর্তন আনা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে । পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান , ভাইস চেয়ারম্যান সহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই নতুন মুখ , যদিও ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব ইতিপূর্বে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং বিগত প্রায় আট মাস ব্যাংকের সামগ্রিক কর্মকান্ড নিবিড় ভাবে পর্বেক্ষনের সুযোগ পেয়েছেন । তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন যে, ব্যাংকটি নিয়ে নানা কথাবার্তা থাকলেও তিনি কোনো অনিয়ম (যেমন – একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে আর্থিক সুবিধা প্রদান , সি এস আর খাতে কোনো বিশেষ গ্রুপের লোকদেরকে চক্ষু বন্ধ করে অর্থ প্রদান , তথাকথিত জঙ্গী অর্থায়ন ইত্যাদি ) খুঁজে পান নি । তিনি আরো বলেছেন যে , বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি প্রতিটি মিটিংয়ে তার পাশেই বসা থাকেন । অর্থাৎ ব্যাংকটির কর্মকান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকীর আওতায় আছে আমার জানামতে প্রায় অর্ধ যুগেরও বেশি আগে থেকে । এখন পর্যন্ত দেশের মানুষ জানতে পারেনি ইসলামী ব্যাংকের কোন লেন দেনটি জঙ্গী অর্থায়নের সাথে সম্পৃক্ত , বা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের তহবিলে ব্যাংকের কত টাকা দেয়া হয়েছে ? কিন্তু এ নিয়ে একশ্রেণীর মিডিয়ার মাতম আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ করে আসছি । আমরা অবাক হই যখন দেখি , এক শ্রেণীর অর্থনীতিবিদ বা বুদ্ধিজীবি (? ) যখন বলেন ব্যাংকের এত হাজার হাজার কোটি টাকার লাভের একটা বড় অংশ একটি রাজনৈতিক দলের কাছে চলে যায় । এদের মস্তিস্কের সুস্থতা নিয়ে তখন প্রশ্ন উঠা কি অস্বাভাবিক ? একটি নিবন্ধিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী যার শেয়ার বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয় , যে কোম্পানীটির ব্যালান্সশীট পরীক্ষা নিরীক্ষণ করে দেশের খ্যাতনামা অডিট ফার্ম , যেটির ডিভিডেন্ট বা লভ্যাংশ ঘোষনা করা হয় শেয়ার হোল্ডারদের সাধারন সভায় , সে কোম্পানীর লাভের টাকা কোনো মহল বিশেষকে দিয়ে দেয়া যেতে পারে এমনটা কোনো সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ কি ভাবে ভাবে আমাদের বুঝে আসে না ।
আমার মনে হয় , যারা নতুন ভাবে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনায় এসেছেন, তারা যেহেতু যথেষ্ট জ্ঞানী, গুনী এবং প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ এবং তাদের নিজেদের কথাই হচ্ছে যে, তারা ব্যাংকটিকে আরো বেশি দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনা করার জন্যই এসেছেন বা তাদেরকে পাঠানো হয়েছে , ব্যাংকটির সমন্ধে এ সমস্ত ফালতু অভিযোগের কোনো ভিত্তি পাবেন না ইনশা আল্লাহ । তারা দেখবেন এ ব্যাংকটির জনশক্তি কী অসাধারন পরিশ্রমী , নিষ্ঠাবান , সৎ ও আমানতদার !
তারা জনশক্তির মধ্যে অবশ্যই একটি দোষ (?) দেখতে পাবেন যে এরা ইসলামের বিধানকে আন্তরিকতার সাথে জীবনে অনুশীলন করে । এজন্যই মহল বিশেষের এত ক্ষোভ , এত কষ্ট ! নতুন পরিচালকগন যদি আন্তরিকতার সাথেই ব্যাংকটির লক্ষ উদ্দশ্য বাস্তবায়ন করতে চান , দেশের অর্থ নৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান , কোটি গ্রাহকের আস্থার এই প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিতে চান ; তবে এই জনশক্তি হবে তাদের সবচাইতে মূল্যবান হাতিয়ার। কেননা এই ব্যাংকটির উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান নিয়ামকই এর জনশক্তি । জনশক্তির সীমাহীন পরিশ্রম , আন্তরিকতা , নিষ্ঠা ও ত্যাগের কারনেই এটি এই পর্যায়ে এসেছে ।
কি করবেন ব্যাংকের কর্মী বাহিনী : একটি আকস্মিক ও অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাংকের কর্মীবাহিনী কিছুটা হলেও বিব্রত ও ভীতিকর অবস্থায় পড়েছে । কর্মীদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে , তারা ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে । প্রথমত : সুদ মুক্ত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে হালাল জীবিকা উপার্জন করা । দ্বিতীয়ত : ইসলামের সুমহান নির্দেশনার আলোকে সম্পদের সুষম ও ন্যায়ভিত্তিক বন্টনের মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যান নিশ্চিত করার কাজে সহযোগিতা করা । তৃতীয়ত: দেশের সকল ক্ষেত্রে বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকায় বিনিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে একটি উন্নত , ভারসাম্যপূর্ন ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্ম নিয়োগ করা । এবং সর্বোপরি শোষন ও জুলুমের নিকৃষ্ট হাতিয়ার সুদের অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্ত করার মহান ব্রতে নিয়োজিত থাকা ।
ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত একাধিকবার নিশ্চয়তা দিয়েছেন , তারা ব্যাংকটির শরীয়াহ ভিত্তিক মৌলনীতি বহাল রাখবেন এবং কোনো ভাবেই সেখানে পরিবর্তন আনবেন না । সুতরাং কর্মীদের কাজ হবে যার যার অবস্থানে আন্তরিকতা , নিষ্ঠা , আমানতদারী ও পেশাগত দক্ষতার সাথে কাজ করা । একই সাথে ব্যাংকের পরিচালনার দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা যে , এর মূলনীতিতে কোনো বিকৃতি আসে কি না । কর্মীগন যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত না হন , একের ঘাড়ে পা রেখে অন্যে এগিয়ে যাওয়ার মত কদাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হন , তেলবাজীর সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে পারেন -বছর পাঁচেক আগে থেকে যে রোগটি ক্যান্সারের মত আই বি বি এল এর নৈতিক ভিত্তিটা দুর্বল করে দিচ্ছে , আমার মনে হয় তারা আল্লাহর রহমতের ছায়া পাবেন । তাদের উন্নত নৈতিকতা দ্বারা নতুন ব্যবস্থাপনাও প্রভাবিত হবেন এবং ব্যাংক তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে । আর যদি তারা দেখেন , কোনো ভাবেই এখানে হালাল রুজী উপার্জনের রাস্তা নেই , আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিবেন ।
সাবেক ব্যাংকার, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।