বিদায় ওবামা

প্রকাশ: ২০১৭-০১-২১ ১০:১৮:৪৭


Obamaবারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট। পর পর দুই মেয়াদে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। যে কারণে তুমুল জনপ্রিয়তা থাকা স্বত্বেও বারাক ওবামাকে ছেড়ে যেতে হয়েছে হোয়াইট হাউস এবং ওভাল অফিস। গতকাল শুক্রবার তিনি হোয়াইট হাউস বুঝিয়ে দিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ২০০৯ সালের এই দিনটিতেই কৃষ্ণাঙ্গ বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। বিদায় নেয়ার আগে আমেরিকানদের উদ্দেশে এক আবেগপ্রবণ চিঠি লিখেন তিনি। দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি সুনাগরিকের কর্তব্যপালনে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। ওবামা বলেছেন, আমি ওই পদে থাকাকালে যা যা শিখেছি, সব আপনাদের কাছ থেকে। আপনারাই আমাকে একজন ভালো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৈরি করেছেন। একজন ভালো মানুষ করে তুলেছেন।
ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন। এর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয় দফায়ও বিজয়ী হন। ২০০৯ সালে তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা অনেক কিছু অর্জন করেছেন কিন্তু তার নেতৃত্বের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল সে অনুযায়ী তার অর্জন হয়নি। সম্ভবত ইতিহাসের চোখে ওবামার এই আট বছরকে খুব ভালোচোখে দেখা হবে না কারণ যাবার সময় তিনি বিভাজনপূর্ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রেখে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ যে সমস্যা রয়ে গেছে তা কঠিন এক সমস্যা। অর্থনীতিতে দুর্বলতা এসেছে। বেকারত্ব আর প্রবৃদ্ধির দিক থেকে খারাপ করেনি। কিন্তু ধনী ও গরীবের মধ্যে বিভাজন বেড়েছে তার সময়ে। এই ব্যবধান কমানোর জন্য যে কাজগুলো করার দরকার ছিল সে কাজগুলো করতে কঠিন সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। কারণ অনেক শক্তিশালী সংগঠন এর বিপক্ষে বিরোধিতা করবে। তবে বুশ সরকারের সময়ে যে গভীর গর্তে পড়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে দেশটি বের হতে পেরেছে ওবামার হাত ধরে।
যে যুদ্ধগুলো বুশ সরকার শুরু করেছিল সেগুলো অপ্রত্যাশিত ছিল, যে পরিমাণ সৈন্যদের জীবন গেছে তার তুলনায় বেশি ক্ষতি হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে। ওবামার সময়ে সেই অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বের হতে পারেনি। তবে আট বছরে বারাক ওবামার যে সাফল্য আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বীমাসেবা চালু করা। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত দুই কোটি মার্কিন নাগরিক এই ব্যবস্থার ফলে সেবা নিতে পারছে। যদিও ওবামার চালু করা এই স্বাস্থ্যসেবা তুলে নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
২০০৮-এর মন্দার কারণে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এত দিনে তার দুই-তৃতীয়াংশের কম তা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন। ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট লিখেছে অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ওবামা তার সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলেছিলেন, অথচ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি তেমন কিছুই করেননি।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ওবামা প্রশাসনের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতাবলে ৫৪৮ একর এলাকাকে সংরক্ষিত প্রাণীজগত হিসেবে ঘোষণা করেছেন ওবামা, যা আর কোনও প্রেসিডেন্ট করেননি। তারপরও ওবামা পরিবেশ বিষয়ক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে নিজেকে সফল দাবি করতে পারেন।
‘গুড বাই’ চিঠি ওবামার
বিদায় নেয়ার আগে মার্কিনিদের উদ্দেশে এক আবেগপ্রবণ চিঠি লিখে গেলেন ওবামা। বিদায়ী কমান্ডার ইন চিফ তাঁর খোলা চিঠিতে লিখেছেন, আমাদের ৪৫তম প্রেসিডেন্টের জন্য জায়গা ছাড়ার আগে আমি শেষবারের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই সবাইকে, আমাকে ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমি ওই পদে থাকাকালীন যা যা শিখেছি, সব আপনাদের থেকে। যথার্থ নাগরিক দায়িত্ব পালনের জন্য আমেরিকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওবামা লিখেছেন, আমি দেখেছি, আমেরিকার মানুষ দয়ালু, দৃঢ় ও নম্র। আর প্রতিনিয়ত আপনাদের নাগরিকত্বের দায়িত্ব পালনে আমি আমাদের ভবিষ্যত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে আনন্দের সঙ্গে এই নাগরিকত্বের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। শুধু নির্বাচনের সময় নয়, শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ বিঘ্নিত হলে নয়, সারা জীবন ধরে চালিয়ে যেতে হবে এই কাজ।
হোয়াইট হাউসের জীবন থেকে বেরলেও তিনি নিজেও এই কাজে আমেরিকাবাসীর সঙ্গে থাকবেন বলে দাবি করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকা কোনও একজন ব্যক্তির প্রকল্প নয়। আমাদের গণতন্ত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দটাই হল আমরা। আমরা, জনগণ। আমরা জয় করব। হ্যাঁ, আমরা পারব।