ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়

প্রকাশ: ২০১৭-০১-২৮ ১০:৪৭:৩৫


British Prime Minister Theresa May (L) and US President Donald Trump meet beside a bust of former British Prime Minister Winston Churchill in the Oval Office of the White House on January 27, 2017 in Washington, DC. / AFP PHOTO / Brendan Smialowski

ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কুটনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তারা বলেছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে একা চলার কোনো সুযোগ নেই। এক দেশের উন্নয়ন ও কুটনীতির সঙ্গে অন্য দেশ জড়িত। তবে দ্বিপাক্ষিক কুটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন একে অন্যের পরিপূরক।

গতকাল শুক্রবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যুগ্ম সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা এসব মন্তব্য করেন। তারা জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দুই নেতা রাশিয়া, ন্যাটো, মেক্সিকো ইত্যাদি ইস্যুর পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েও কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মে জানান, তিনি ট্রাম্পকে ব্রিটেন সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তার আমন্ত্রণ সানন্দে গ্রহণ করে এবছরই লন্ডন সফরে সম্মতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মেক্সিকোর সঙ্গে উত্তপ্ত সম্কর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে জবাব দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সীমান্তে দেয়াল তোলা নিয়ে মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করার ঘোষনা দিয়েছেন। কিন্তু আমি দেশটির সঙ্গ সম্কর্ক উন্নয়নে বিশ্বাস করি। তবে ওই দেশটির সঙ্গে সম্কর্ক উন্নয়ন আমি নিজের দেশের যুবকদের চাকরি হারানোর বিনিময়ে করতে পারি না। থেরেসাকে  এ প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, এটা একান্তই যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দ্বিপাক্ষিক বিষয়।
তথ্য আদায়ে নির্যাতন কাজ দেয় বলে ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিকরা সেই প্রসঙ্গ তুললে ট্রাম্প আবারো নিজের কথা সমর্থন দেন। তিনি বলেন, নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল ম্যাটিস বলেছেন, নির্যাতনে তেমন তথ্য আদায় করা যায় না। কিন্তু আমি তার কথার সঙ্গে একমত নই। তারপরেও যেহেতু তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, তাই তার উপর আমাকে আস্থা রাখতেই হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আসে পুতিনের প্রসঙ্গও। ট্রাম্প বলেন, তিনি পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। তবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রক্ষায় তিনি আশাবাদি। রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের নির্মুল অভিযান চালানোর ব্যাপারে আশাবাদি বলে জানান ট্রাম্প। এ পর্যায়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়, শনিবার যখন পুতিনের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন তখন কি রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিবেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, এ ব্যাপারে এখন তিনি কথা বলবেন না। তবে চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চান। এ সময় থেরেসা মে বলেন, ব্রিটেন চায় এখনই যেন রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হয়। ন্যাটো প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, তিনি এই সংস্থার বিপক্ষে নন, তিনি শতভাগ ন্যাটোর পক্ষে।
এর আগে থেরেসা মে ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে একান্তে বৈঠক করেন। ট্রাম্প ছাড়াও উচ্চপদস্থ আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম দেশটিতে সফরে গেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তার এই সফর ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে থেরেসা এদিন বলেন, ‘আগ্রাসনকারী’ হিসেবে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের যে বদনাম আছে তা ঘুঁচাতে চান। নিজেদের মানসম্মানের বিনিময়ে আর কোনো ব্যর্থ যুদ্ধে তারা জড়াতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
থেরেসা মে জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন আঙ্গিকের কূটনৈতিক সম্পর্ক চাইছেন। ‘বিশেষ সম্পর্ক’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আবারও বিশ্বে ইঙ্গ-মার্কিন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ট্রাম্পকে তার স্বপ্নের এই বার্তা দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে ফিলাডেলফিয়ায় রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সামনে দেয়া ভাষণে থেরেসা মে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার ও ক্যামেরনের সঙ্গে নিজের পার্থক্য স্পষ্ট করেছেন। এদিন তিনি বলেন, ‘আশা করি, বিশ্বে নতুন করে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র আর কখনও কোনও সার্বভৌম দেশে আগ্রাসন চালাবে না।’ তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ব্রিটিশ আগ্রাসনকে ‘ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি’ উল্লেখ করে সেসব দিনে ফিরে না যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়’, বিশেষত সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী লড়াইয়ে দেশ দু’টির ‘নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা’ রয়েছে বলেও উল্লেখ করে বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, আমরা পূর্ববর্তী ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতিতে ফেরত যাচ্ছি। তবে আমরা বাস্তব হুমকির সম্মুখীন যদি হই তবে হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। আমাদের শক্তিশালী, স্মার্ট হতে হবে এবং লক্ষ্য স্থির রেখে এগোতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থ-সম্পর্কিত বিষয়গুলো অবশ্যই সমাধান করতে হবে।’ মে ওই বক্তব্য ১৮ মাস আগে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হওয়া ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ হলো ইরানের আগ্রাসন থেকে মিত্র দেশগুলোকে রক্ষা করা।’ মে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির পারমাণবিক চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘চুক্তির শর্তগুলো ইরান ঠিকমতো মানছে কিনা, তা আরও সতর্কভাবে খেয়াল রাখা হবে।’