বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রানীতির তাগিদ
প্রকাশ: ২০১৭-০১-২৯ ১২:৫৩:২৯
জাতীয় বাজেটে ঘোষিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও ৫ দশমিক ৮ শতাংশে মূল্যস্ফীতি সীমিত রাখার লক্ষ্যে প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু নভেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৫ দশমিক শুন্য ১ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।
নতুন মুদ্রানীতি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগ বাড়ানো। গত কয়েকবার বাংলাদেশ ব্যাংক সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করছে। এখন সেখান থেকে সরে এসে সংকুলনামুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে হবে। মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির মাত্রা বাড়াতে হবে। যদি সেটা বাস্তবায়ন নাও হয় তারপরও বাজারে একটা ম্যাসেজ দেওয়া যে বিনিয়োগ বাড়ছে। একইসঙ্গে তা বাস্তবায়নের জন্যও প্রচেষ্টা চালানো। এজন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরণের শিল্পকে গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে কম সুদের মানুষ ঋণ পায়। তাহলে বিনিয়োগের উপর আগ্রহ বাড়বে। ঋণ বিতরণের জন্য শুধুমাত্র পুঁজিঘন বা বড় শিল্পপতিদের দিকে ঝোঁকা যাবে না। কারণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়ে বেশি। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ে বেশি চাপাচাপি করার দরকার নেই। তবে তা যেন সহনীয় মাত্রায় রাখা যায় সেদিকটা দেখতে হবে। দেশে বেকার লোকের সংখ্যা বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি নিম্ন থাকলে তা থেকে লাভবান হওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবীদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেন, এখন যেহেতু মুল্যস্ফীতি সহনীয় অবস্থায় রয়েছে সেজন্য বিনিয়োগ উদ্দীপক ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি দরকার।
বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ-গ্রীস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন মনে করেন অতিরিক্ত তারল্য এখন ব্যাংক খাতের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে না। বাড়ছে না কর্মসংস্থান। কারণ টাকার প্রবাহ উদ্যোক্তাদের মধ্যে নেই। ব্যাংক টাকায় ভরে গেলে উদ্যোক্তা শূন্য হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এখন সেটাই হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে সরকারের জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে। কিন্তু বিনিয়োগ মন্দায় ব্যাংকের ঋণ চাহিদা নেই। এ কারণে বেড়েছে অলস অর্থের পরিমাণ। তিনি মনে করেন, মুদ্রানীতির অন্যমত কাজ হচ্ছে এখন বাজারে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু এর বড় একটি নেতিবাচক দিক হচ্ছে শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি।
সরকার বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে নানা কারণে তা ভালভাবে সফল হচ্ছে না। আর মুদ্রানীতিতে যেহেতু আগামীতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয় সেজন্য আজকের মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগ মন্দা কাটাতে তাই মুদ্রানীতিতে কী নির্দেশনা থাকবে সেদিকে নজর সবার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপী ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ দিতে নানাভাবে অনুত্সাহ দেখাচ্ছে। নতুন ঋণ দিয়ে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে চাইছে না ব্যাংকের কর্মকর্তারা। নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ব্যবস্থায় সুশাসন নিশ্চিত করে খেলাপী ঋণের বোঝা কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
আগের মুদ্রানীতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি অন্যদিকে রেমিটেন্স আয় কমে যাওয়ার কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রবাসীদের আয় ব্যাংকিং চ্যানেল বাদ দিয়ে হুন্ডি হয়ে আসছে। হুন্ডি বেড়ে যাওয়া ব্যাংকিং চ্যানেলে নগদ ডলারের পরিমাণ কমে এসেছে। নতুন মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে রেমিট্যান্স বাড়ানোসহ অলস অর্থ বিনিয়োগে নিয়ে আসাই চ্যালেঞ্জ হবে।
আজ সকাল সাড়ে ১১টায় চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারী-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবীর। গভর্নর হিসাবে ফজলে কবীরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি এটি। প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা বা এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ৬ মাস অন্তর আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যান্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পণা তুলে ধরা হয়। মুদ্রানীতি চুড়ান্ত করতে অন্যান্য বছরের মত এবারও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যাংকার, প্রাক্তন গভর্নর, প্রাক্তন মন্ত্রী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সূত্র: ইত্তেফাক
সানবিডি/ঢাকা/এসএস