সাঁওতালপল্লিতে অগ্নিসংযোগে পুলিশ : আদেশ ৭ ফেব্রুয়ারি

প্রকাশ: ২০১৭-০১-৩১ ১৬:০৬:৫৪


Suprimগাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য সরাসরি জড়িত মর্মে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর আদেশের জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃঞ্চাদেব নাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন ও সামিউল আলম সরকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

পরে মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, আদালত গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দাখিল করা প্রতিবেদন ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যে মামলায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দিতে বলেছেন। দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত ৭ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেবেন।

এর আগে গতকাল ৩০ ফেব্রুয়ারি গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য জড়িত মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টে ৬৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন দাখিল করেন গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল্লাহ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর ঘটনার জন্য স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি এবং উক্ত ঘটনার সময়ে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য দায়ী। এই আগুন লাগানোর ঘটনার সাথে ২ জন পুলিশ সদস্য ও গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ১ জন সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রদর্শিত ভিডিও ক্লিপ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, কিছু পুলিশ সদস্য এবং ২ জন সিভিল পোশাকধারী ব্যক্তি সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোয় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। আরো কিছু পুলিশ সদস্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন যারা আগুন লাগানোয় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেননি। তবে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেননি।

সেখানে বলা হয়েছে, চামগাড়ী বিল ও কুয়ারমারা নামক স্থানে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারী এলাকায় আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার পরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এবং হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে বসতি স্থাপনকারীগণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আগুন লাগানোর আগেই নির্মিত স্থাপনা থেকে আনুমানিক ৫০০/৬০০ গজ দূরে মাদরপুর ও জয়পুর গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলো মর্মে সাক্ষীদের বক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়েছে। ফলে এরূপ প্রেক্ষাপটে সাক্ষীগণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত স্থানীয় অপরাধীদের সুনির্দিষ্টভাবে সনাক্ত করতে পারেননি। তাছাড়া কোন কোন সাক্ষী তাদের জবানবন্দিতে আগুন লাগানোর ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলেও তাদের উপস্থিতির বিষয়টি বর্ণিত প্রেক্ষাপটে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ পোশাক পরিহিত থাকায় সাঁওতালদের স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের গুলির আওয়াজে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সাঁওতালগণ তাদের স্থাপনা ছেড়ে চলে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে গ্রুপটি খামারের ভেতরে প্রবেশ করেছিলো তারাই চামগাড়ী বিল নামক স্থানে সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনার কাছে গেছে। পেনড্রাইভে প্রদত্ত ভিডিও ক্লিপসূমহ পর্যবেক্ষণে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও অন্য সাক্ষীদের পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, চামগাড়ী বিল নামক স্থানে নির্মিত স্থাপনা থেকে সাঁওতালগণ চলে যাওয়ার পর আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র্যা ব ও ডিবির পোশাক পরিহিত সদস্য এবং সাধারণ পোশাকধারী দুই জন ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ওই গ্রুপটির মধ্য হতে পুলিশ লেখা পোশাকধারী দু’জন, ডিবি লেখা পোশাকধারী একজন ও সাধারণ পোশাকধারী দু’জন (লাল ও সাদা রং এর শার্ট পরিহিত) ব্যক্তিকে সক্রিয়ভাবে চামগাড়ী বিল নামক স্থানে সাঁওতালদের স্থাপনায় আগুন লাগাতে দেখা গেছে। অপরদিকে কুয়ামারা, সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারী এলাকায় সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনায় কতিপয় স্থানীয় জনতা আগুন লাগিয়েছেন।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে অগ্নিসংযোগে পুলিশ জড়িত কি না সে বিষয়ে তদন্তের জন্য গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

ওই নির্দেশ মোতাবেক গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনার তদন্ত করে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।