রাজধানীতে চেকপোস্টে লাগামহীন চাঁদাবাজি

প্রকাশ: ২০১৫-০৯-২২ ১১:১৪:১৯


police“কী চায় বোঝেন না, কত দিমু কন? না দিলে এইহানে-ই দাঁড়ায় থাকতে হইবো। হ্যায় তো দুইশ’ ট্যাহা চায়… কত দিমু? ……আচ্ছা দিতাছি” রাজধানীর শহীদ নগর থেকে ডিমের কেস (প্লাস্টিকের বক্স ) নিয়ে নিমতলী পাকিজা প্লাস্টিকে যাচ্ছিলেন ভ্যান চালক বাবুল মিয়া। পলাশী ফায়ার সার্ভিসের সামনের পুলিশের  তল্লাশি চৌকিতে (চেকপোস্ট) তাকে থামার নির্দেশ দেয়া হলো। ভ্যানের মাল খুটিয়ে দেখে ভ্যানচালককে দোকান মালিককে ফোন দিতে বললেন কর্তব্যরত আনসার সদস্য।

এরপর মালিকের সঙ্গে ভ্যানচালক বাবুল মিয়ার কথোপকথন হয় এভাবেই। কথা শেষ হওয়ার পর আনসার সদস্যকে ১০০ টাকা দিয়ে ভ্যান নিয়ে চলে গেলেন ‍বাবুল মিয়া।

গত বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার ঘটনা এটি। এখানে নয়টা থেকে রাত পৌনে দশটা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায়, পুলিশের চেকপোস্টের সামনে দিয়ে পণ্য বোঝাই ভ্যান রিক্সা, পিকআপ ভ্যান গেলেই সেগুলোকে দাঁড় করানো হচ্ছে এবং তল্লাশির নামে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশের এই পিক আপ ভ্যানের দায়িত্বরতদের মধ্যে একজন এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) পদ মর্যাদার পুলিশ সদস্যও ছিলেন যিনি কিছু দূরে দাঁড়িয়ে এসব তদারকি করছেন। তার বুকের নেমপ্লেটে লেখা ছিল শাহীন। তবে যে আনসার সদস্য চাঁদা তুলছেন তার বুকে কোনো নেমপ্লেট নেই।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে পলাশী থেকে নীলক্ষেত যাওয়ার সড়কে দেখা যায় পণ্যবাহী পরিবহনের পাশাপাশি থামানো হচ্ছে যুগলদের রিক্সাও। রিক্সা থেকে পুরুষ সদস্যকে আড়ালে ডেকে নিয়ে নেয়া হচ্ছে নাস্তার বিল (চাঁদা)।

পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার ঢাকা সিটি কলেজের চতুর্থ বর্ষের ঐ শিক্ষার্থী (মেহেদী হাসান) জানান, তিনি তার বান্ধবীকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে এসেছিলেন। বাসায় ফেরার সময় চেকপোস্টের পুলিশ তাদের পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেয়ার পর তার নিকট থেকে নাস্তা করার জন্য ২০০ টাকা নিয়েছেন।

পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মফিজউদ্দিন আহমেদকে লালবাগ থানা এলাকার চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে জানানো হলে বলেন, চেকপোস্ট বসানো হয় নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য। সেখানে কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে বা কোন প্রকার অর্থ লেনদেন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে এই দৃশ্য শুধু দুটি চেকপোস্টেরই নয়, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রবেশের পয়েন্টগুলোতে স্থাপিত চেক পোস্টে এভাবেই লাগামহীনভাবে চাঁদা আদায় করছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য। আজিমপুর, বকশীবাজার, বঙ্গবাজার পুলিশ চেকপোস্ট ঘুরেও দেখা গিয়েছে একই দৃশ্য।

চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের লাগামহীন চাঁদাবাজির কবল থেকে পণ্যবাহী পরিবহন থেকে শুরু করে প্রেমিক যুগল কেউই রেহাই পাচ্ছে না। ১৭ ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুই দিন ঘণ্টাব্যাপী চেকপোস্টের আশেপাশে অবস্থান নিয়ে ২০টির বেশি যানবাহন থেকে পুলিশের এই চাঁদাবাজি প্রত্যক্ষ করা গেল। যে কোনো ধরনের পণ্য নিয়ে চেকপোস্ট পার হতে গেলেই গুণতে হচ্ছে অর্থ। এছাড়া মোটরসাইকেল আরোহীদের নিকট থেকেও অর্থ নিতে দেখা গেল তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ৪৯টি থানার আওতাধীন শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নগরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশের চেক পোস্ট রয়েছে। এসব চেক পোস্টের অধিকাংশতেই তল্লাশির নামে চাঁদা তোলা হয়।

তবে বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার, কাজলা, সায়দাবাদ জনপথের মোড়, বঙ্গভবনের পিছনে, জয়কালী মন্দির, বাবুবাজার ব্রিজ, বাংলাবাজার মোড়, কারওয়ান বাজার রেল গেইট, ফার্মগেইট, মহাখালী রেল গেইট, কাকলী এলাকার চেকপোস্টগুলোতে অন্য এলাকার তুলনায় পুলিশের চাঁদাবাজি অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।

আর চেকপোস্টগুলোতে তল্লাশির আওতায় সব ধরণের যানবাহন থাকলেও পুলিশের লক্ষ্য থাকে মূলত পণ্য বোঝাই পরিবহন, অটোরিকশা অথবা মোটরসাইকেলের দিকে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখার  (ডিসি) উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলামকে চেকপোস্টে পুলিশের চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে জানানো হলে তিনি বলেন, পুলিশের অপরাধ তদন্তে পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবছরই পুলিশের নিজস্ব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অপরাধের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের সাজা দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে জনসাধারণকেও এগিয়ে আসতে হবে। অন্যায়ভাবে কেউ অর্থ দাবি করলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন বিভাগকে বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে জানালে ব্যবস্থা নেয়াও সহজ হয়। সূত্র: বাংলানিউজ