কনডেম সেলে মুফতি হান্নানের হাতে মোবাইল ফোন!
প্রকাশ: ২০১৭-০৩-০৯ ১০:২৭:৫৩
কনডেম সেলে হুজি প্রধান মুফতি আব্দুল হান্নান কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। মোবাইল ফোনে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে মুফতি হান্নান মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সও করেছেন। তার মোবাইল ফোনে একটি বিকাশ একাউন্টও ছিল। এই একাউন্টে তার কাছে টাকা পাঠানো হতো। সেই টাকা তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার হিরণ গ্রামে বসবাসরত তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দিতেন। মুফতি হান্নান কারাগার থেকেই ফেসবুকে তথ্য আদান-প্রদান করেন। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের নজরে আসার পর তারা ঐ ফেসবুক একাউন্ট ডিএ্যাক্টিভ করে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যে গণমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত মুফতি হান্নানের একটি ভিডিও কনফারেন্সের ভিডিও ফুটেজ এখন গোয়েন্দাদের হাতে।
গত সোমবার গাজীপুরের বোর্ডবাজারে মুফতি হান্নানসহ ২১ জঙ্গিকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানে জঙ্গিদের হামলার ঘটনার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে কমান্ডো হামলার মাধ্যমে ছিনিয়ে নেয়ার ছক কষেছেন তিনি (মুফতি হান্নান) নিজেই। ফাঁসি কার্যকরের আগে যে তাকে ছিনিয়ে নেয়া কিংবা বড় ধরনের জঙ্গি হামলার কোনো ঘটনা ঘটতে পারে সেই বিষয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বোমা মেরে প্রিজনভ্যান থেকে মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার পর কারাগারে তল্লাশি করে কারা কর্তৃপক্ষ। উদ্ধার করে একটি মোবাইল ফোন। এই মোবাইল ফোন দিয়ে আরেক জঙ্গির সঙ্গে কথা বলেছে মুফতি হান্নান। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করে। তবে মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার ব্যর্থ ঘটনার পর এসব ঘটনা কারা অধিদফতর বেমালুম চেপে যাচ্ছে। কারা অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের কাছে কোনো বক্তব্যও দিচ্ছেন না।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মুফতি হান্নানকে যে ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে -এ আশঙ্কা কারা অধিদফতরকে জানানো হয়েছিল। এরপরও কারা অধিদফতর বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে ঘটনাস্থল থেকে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ক্লুহীন মোবাইল সিমকার্ড, বাঁশি ও কালো গেঞ্জি উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া এক জঙ্গির ব্যাগ ও ফেলে যাওয়া আরেকটি ব্যাগ থেকে এসব আলামত জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা এসব আলামতের ধরনে প্রমাণ দিচ্ছে, মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তা তার নিজেরই।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, মুফতি হান্নানকে কাশিমপুর কারাগারের যেই সেলে রাখা হয়েছে তার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের এলাকায় বৈদ্যুতিক প্রাচীর নেই, এটা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। নিরাপত্তা দেয়াল না থাকার কারণে বাইরে থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়টি সুবিধাজনক নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি ইতোমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ফাঁসির আসামি মুফতি হান্নানসহ ২১ জঙ্গিকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তায় ১৫ পুলিশ সদস্য ছিলেন। সাধারণত হাবিলদার পদমর্যাদার কারো নেতৃত্বে প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তবে মুফতি হান্নানসহ ২১ জঙ্গিকে বহনকারী প্রিজনভ্যানের নিরাপত্তা এ গ্রেডে উন্নীত করা হলেও ঘটনার দিন নিরাপত্তায় কোনো এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন না।