অনলাইনেও রমরমা মাদকের বাণিজ্য
প্রকাশ: ২০১৭-০৩-১২ ১৩:৫৪:১৭
তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে যোগাযোগে এসেছে নতুন মাত্রা। সুঁই থেকে শুরু করে জাহাজ কেনাবেচা, সব সম্ভব ঘরে বসেই। অপরাধীরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে অপরাধীদের বিভিন্ন অপকর্মের কথা প্রায়ই শোনা যায়। তবে এবার তা সীমা ছাড়িয়েছে। ইদানীং মাদকের মত ক্ষতিকর বাণিজ্যও ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে।
গ্রাহক নিজের সুবিধামতো অনলাইনে অর্ডার করলে ঘরে বসেই পাচ্ছে বিয়ার, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। ভাসমান এসব মাদক ব্যবসায়ী অনলাইন ও মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে চাহিদা মতো মাদকদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছে ক্রেতার দ্বারপ্রান্তে।
মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের এই বাণিজ্য চাঙ্গা রাখতে প্রতিনিয়তই খুঁজে বের করছে অভিনব সব পন্থা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) প্রচার চালাচ্ছেন। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে তারা ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক মাদক দ্রব্য পৌছে দিচ্ছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে মাদক ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম চালানোর প্রমাণ মিলেছে।
অনুসন্ধানে মিলেছে “অনলাইন ড্রিংক সেল বিডি” (Online Drink Sale BD) নামের এমন একটি ফেসবুক পেজ। এই পেজটিতে বিদেশি মদের বিজ্ঞাপন ও মূল্য দেওয়া রয়েছে। সেই সঙ্গে দেওয়া আছে একটি মুঠোফোন নম্বরও। ওই নম্বরে যোগাযোগ করেই গ্রাহকদের সরবরাহ করা হচ্ছে মাদক।
এডমিন পেজে লেখা হয়েছে: (we provide any typs of drink like bear, wine, seotch, and many more imported drink from 5%to 45% alcohol so guyes let’s contact now. Home Delivery Available anywhere in bangladesh.
পণ্যের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে পেজে আরও বলা হয়েছে- “Payment Method: Cash On Delivery”।
অনলাইন ও মুঠোফোনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে লোক মারফত পৌছে দেওয়া হয় ক্রেতার ঠিকানায়।
রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে অনলাইনের মাধ্যমেই চলছে মাদকদ্রব্য সরবারাহের বাণিজ্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব পন্থায় রমরমা বাণিজ্য করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো অঞ্চল (উত্তর)-এর সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে মাদকব্যবসা চলছে মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমেই। মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের চালান আনা ও সরবরাহের ক্ষেত্রে অভিনব কায়দা অবলম্বন করছে।
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনেও তাদের বাণিজ্য পরিচালনা করছে।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এই বিষয়গুলো ধরে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
শুধু তাই নয়, রাজধানীর গুলশান বনানী, বাড়িধারা, উত্তরা সহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ভাসমান মাদক ব্যবসায়ীরাও চুপিসাড়ে করছে তাদের বাণিজ্য। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়্যার হাউজ থেকে বিদেশি মদ ও বিয়ার সংগ্রহ করে সেগুলো নিজেদের কাছে রাখছে তারা। মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ক্রেদার চাহিদা মত মাদকদ্রব্য নিরাপদ স্থানে পৌছে দেওয়া কাজটিও করছে এ চক্রের সদস্যরা। আর নিরাপদে বহনের জন্য বিক্রেতারা ব্যবহার করছে প্রাইভেটকার।
এর আগে, ০৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বনানী এলাকার ১১ ও ১৫ নম্বর রোড থেকে ভাসমান মাদক বিক্রেতা চক্রের চার সদস্যকে আটক করে র্যাব-১ এর একটি দল। এই চক্রের সদস্যরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাদকের অর্ডার নিয়ে ক্রেতার কাছে সরবরাহ করার কাজ করছিল। এই চক্রের সদস্যরা দু’টি প্রাইভেটকার ব্যবহার করতো বলে জানিয়েছে র্যাব। চার মাদক সরবরাহকারীরা হলো মো. বাবুল (৩৩), জসিম (১৮), সবুজ (২০) ও মো. সাইফুল ইসলাম (৩০)। তাদের সঙ্গে থাকা দু’টি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে থেকে ৪০০ ক্যান বিয়ার, ১২০ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর বনানী ও গুলশানের এই ভাসমান মাদক বিক্রেতাদের একাধিক চক্র রয়েছে।মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে বিয়ার ও বিদেশী মদ ক্রেতার কাছে সরবরাহ করে থাকে। ক্রেতার কাছে মাদক পৌঁছে দেওয়ার জন্য এসব চক্রের অন্তত শতাধিক বাহক আছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক সরবরাহের জন্য আটক আসামিরা প্রাইভেটকার ব্যবহার করতো। নিরাপদ সরবরাহের সময় ওই গাড়ির আশেপাশে এই চক্রের আরও একটি টিম মনিটরিংয়ের কাজ করতো।
এদিকে, মোটর সাইকেলেযোগে নিরাপদ রাস্তার দিক-নির্দেশনা দেওয়ার কাজ করতো অন্য একটি চক্র।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, সমাজ থেকে মাদক নির্মূল ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি।
রাজধানীকে মাদক মুক্ত করতে র্যাবের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।