পলিথিন নিয়ন্ত্রণে চাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
আপডেট: ২০১৫-১০-২৬ ১৯:২৪:০৬
সরকার পরিবেশের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০২ সালে পলিথিন শপিং ব্যাগের উত্পাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উপর আইন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ আইন দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। আইন প্রণীত হওয়ায় এবং তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে বর্তমানে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না। পলিথিনের ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংশিষ্ট সংস্থাগুলোর কোন কার্যকর তৎপরতা এবং মনিটরিং পর্যাপ্ত না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।
শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ৪০ লাখের বেশী পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হয়। যত্রতত্র ফেলে দেয়া পলিথিন জমা হচ্ছে ড্রেনে, জলাশয়ে বা নালা নর্দমায়। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। ঢাকাসহ বড় বড় জনবহুল শহরে এখন বড় ধরনের আতঙ্ক জলাবদ্ধতা। সিটি করপোরেশন এর জন্য বাড়তি বাজেট করতে হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনে।
রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে বর্তমানে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না। পলিথিনের ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংশিষ্ট সংস্থাগুলোর কোন কার্যকর তৎপরতা এবং মনিটরিং পর্যাপ্ত না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে পলিথিন ও পলিথিনজাত দ্রব্যসামগ্রীর ব্যাপক ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনানুসারে সকল বা যে কোন প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা প্রপাইলিনের তৈরি কোন সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলে এরূপ সামগ্রীর উত্পাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন নিয়ন্ত্রণে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা জরুরী।
রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় এক হাজার নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে। এগুলোর বেশীর ভাগই পুরানো ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গীরচর ও টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। এছাড়া চট্রগ্রামসহ জেলা শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে পলিথিন কারখানা। পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। ‘জরুরী রফতানি কাজে নিয়োজিত’ লেখা ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। প্যাকেজিংয়ের ছাড়পত্র নিয়ে পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে।
রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় এক হাজার নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে। এগুলোর বেশীর ভাগই পুরানো ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গীরচর ও টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা।
পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার গ্রহণ করলে ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করা হলে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা মাছ ও মাংস দ্রুত পঁচনে সহায়তা করে। পিভিসি এবং অন্যান্য প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা ৭০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে পোড়ালে ডাইঅক্সিন জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয় যা জন্মগত বিকলাঙ্গতা, চর্মরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্নক রোগের জন্য দায়ী; ওভেনপ্রুফ প্লাস্টিক কনটেইনারে খাবার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারে ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, সীসা মিশে যায়, যার ফলে মরাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে; পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়, এমনকি ডায়রিয়া ও আমাশয় ছড়াতে পারে এ ব্যাকটেরিয়া থেকে।
পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার গ্রহণ করলে ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করা হলে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা মাছ ও মাংস দ্রুত পঁচনে সহায়তা করে। পিভিসি এবং অন্যান্য প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা ৭০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে পোড়ালে ডাইঅক্সিন জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয় যা জন্মগত বিকলাঙ্গতা, চর্মরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্নক রোগের জন্য দায়ী
পলিথিন অপচনশীল বলে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি এবং অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে; পঁচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়, উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। পলিথিন শত শত বছর ধরে স্থায়ী, ছোট ছোট টুকরায় ভেঙ্গে যায় এবং সময়ের সাথে সাথে রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু কখনও সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে যায় না। পরিত্যাক্ত পলিথিন ব্যাগ সমুদ্রের অতিরিক্ত দূষণকারী কীটনাশক ও শিল্পবর্জ্য শোষণ করে এবং সমুদ্রতলের প্রাণে বড় মাত্রায় ছড়িয়ে দেয়। তখন ক্ষতিকর পদার্থ খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করতে পারে। প্রজনন সিস্টেম ব্যাহত করে, বন্ধ্যাত্ব, কিছু ধরনের ক্যান্সারের সম্ভাব্য সংযোগ সৃষ্টি করে। পলিথিন নিষিদ্ধ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে, পাটের ব্যবহার বাড়বে, মাঠ পর্যায়ে কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাটের ব্যাগ আমেরিকায় রফতানির উদ্যোগ নেয়া হলে রফতানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষক পাট চাষে উত্সাহিত হবে এবং পাটের ন্যায্য দাম পাবে। বাংলাদেশ সোনালী আঁঁশ পাটের ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
পলিথিন নিয়ন্ত্রণে আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজন
পলিথিন নিষিদ্ধকরণ আইন বাস্তবায়ন করা, পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা এবং পাটের ব্যাগ ব্যবহার এ উত্সাহ যোগান দেয়া। বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং পলিথিন উত্পাদন, বিপননকারী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ও ঠোংগা ইত্যাদি সহজলভ্য করা এবং এগুলো ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পরিবেশ অধিদপ্তর, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এফবিসিসিআই-এর সমন্বয় সাধন করা। সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে মার্কেটসমূহে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত মনিটরিং করা একান্ত প্রয়োজন। সর্বপোরি পলিথিন ব্যবহার বন্ধে চাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
লেখক: চেয়ারম্যান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, nirapadfoundation@gmail.com