এলইডি লাইট উৎপাদন শিল্পের বিকাশে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির দাবি
প্রকাশ: ২০১৭-০৪-০১ ২২:১০:১৫
আধুনিক বিশ্বে বিশাল সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এলইডি লাইট কারখানা। বাংলাদেশেও রয়েছে এর অপার সম্ভাবনা। ব্যাপক বিদ্যুত সাশ্রয়ী এলইডি বাতি উৎপাদন করে নানাভাবে লাভবান হতে পারে দেশ। আমদানি হ্রাস করে বিপুল মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। এছাড়া দেশীয় শিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং দক্ষ জনবল তৈরি হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রধান বাঁধা হিসেবে দেখছেন বিদ্যমান ভ্যাট কাঠামোকে। তাদের দাবি উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হলে দেশীয় বিনিয়োগের সুরক্ষা হবে এবং এ শিল্পের দ্রুত এবং অর্থবহ বিকাশ ঘটবে।
জানা গেছে, এনার্জি সেভিং বা সিএফএল (কম্প্যাক্ট ফ্লুর্যাসেন্ট লাইট) বাল্বের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে এলইডি বাতি। সিএফএল বাল্বের উৎপাদন ও কাঁচামাল আমদানি ভ্যাটমুক্ত থাকলেও এলইডি লাইটের ক্ষেত্রে সেটা নেই। সম্প্রতি রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানায় এলইডি বাল্ব, লাইট, প্যানেল লাইট, টিউব লাইট ইত্যাদির ব্যবহার শুরু হয়েছে। যার বেশিরভাগই আমদানি করা হচ্ছে। এই আমদানি নির্ভরতা কমাতে ইতোমধ্যে এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী উদ্যোক্তা। দেশেই গড়ে তুলছেন এলইডি লাইটের মতো উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ভারী উৎপাদন শিল্প। এতে করে দেশে সম্ভাবনাময় এক নতুন শিল্প বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু, এলইডি বাতি উৎপাদন শিল্পের বিকাশে এর উপর বিদ্যমান সমুদয় ভ্যাট অব্যাহতির দাবি জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি, এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে একটি লিখিত সুপারিশমালা দিয়েছে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্স এন্ড হোম এ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিইইএমইএ)। যেখানে এলইডি লাইট উৎপাদন শিল্প বিকাশের পথ সুগম করতে ভ্যাট অব্যাহতির দাবি জানানো হয়।
বিইইএমইএ সূত্রমতে, বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় সরকার প্রায় একদশক আগে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সরঞ্জাম ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করে। তখন বাজারে আসে এনার্জি সেভিং বা সিএফএল বাল্ব। ট্রাংস্টেন বাল্বের পরিবর্তে সিএফএল বাল্ব ব্যবহার হওয়ায় ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। তখন এনার্জি সেভিং বা সিএফএল বাল্ব ব্যবহারে জনসাধারনকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার সারা দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিনামূল্যে এনার্জি সেভিং বাল্ব বিতরণ করে। দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ২০১০ সালের ১০ই জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক এসআরও (নম্বর: ২১৪-আইন/২০১০/৫৬৩-মূসক) জারির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সিএফএল বাল্ব এর উপর আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে সমুদয় ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করে। কিন্তু, সিএফএল’র চেয়েও ৫০-৬০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাল্ব এর উপর আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি নেই। ফলে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে এলইডি বাতি উৎপাদন কারখানা স্থাপনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তা।
বিইইএমইএ’র মহাসচিব সাহাবুদ্দিন সবুজ বলেন, সিএফএল’র চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুত সাশ্রয়ী এলইডি বাতি। তাই সিএফএল বাতির মতো এলইডি বাতি উৎপাদন ও কাঁচামালকে ভ্যাটমুক্ত করা সময়ের দাবি। একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শুধুমাত্র ঢাকায় এলইডি বাল্ব ব্যবহার করে দৈনিক ৬’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, সিএফএল পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আর তাই যত দ্রুত সম্ভব এলইডি বাতি কারখানাকে ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় আনা উচিত।
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ ও ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানী সাশ্রয় করা। আর এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে নেয়া হয়েছে কয়েকটি অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যবস্থা। যার মধ্যে রয়েছে সড়ক ও স্থাপনাগুলোতে এলইডি বাতি লাগানো।
জানা গেছে, দেশেই পূর্ণাঙ্গ এলইডি বাতি উৎপাদন শিল্প স্থাপন করেছেন বেশ কিছু উদ্যোক্তা। বিনিয়োগ করেছেন প্রচুর অর্থ। বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে আছে ভূমিক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণ, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু কাঁচামালসহ এলইডি বাতি উৎপাদনের মেশিনারিজ স্থাপন, মান নিয়ন্ত্রন, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। অথচ সহায়ক রাজস্বনীতির অভাবে সিএফএল বাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত এলইডি লাইট। এতে করে হুমকীর মূখে পড়ছে পূর্ণাঙ্গ এলইডি লাইট উৎপাদন কারখানা স্থাপনের বিশাল বিনিয়োগ।
উদ্যোক্তারা জানান, সিএফএল’র চেয়ে আরো বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি হিসাবে বিশ্বে জায়গা করে নিয়েছে এলইডি বাল্ব। বিশেষ করে, কমপ্লায়েন্ট কারখানা স্থাপনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাতি ব্যবহারের বিকল্প নেই। সিএফএল’র চেয়ে কম ওয়াটের এলইডি বাতিতেও পাওয়া যায় বেশি আলো। সাধারন বাল্বের চেয়ে এলইডি দশগুন বেশি টেকসই।
এলইডি বাতি ব্যবহারের আরো একটি বিশেষ সুবিধা সম্পর্কে তারা জানান, সিএফএল বাল্ব নষ্ট হওয়ার পর তা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, কেননা এতে ব্যবহার করা হয়েছে মার্কারি। যা নবায়নযোগ্য নয় এবং বিষাক্ত। এছাড়া, সিএফএল বাল্বের ভেতরে ব্যবহৃত পারদ মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং ভূমিতে পতিত হলে ভূমি দূষণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে, এলইডি বাল্বে মার্কারির মতো ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যবহার না করায় তা পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর নয়।
উদ্যোক্তাদের দাবি- স্থানীয় এলইডি বাল্ব উৎপাদন শিল্প ও এর প্রয়োজনীয় কাাঁচামাল আমদানীতে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হলে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটবে। এলইডি বাতির দামও নেমে আসবে গ্রাহকদের হাতের নাগালে। এতে করে সর্বত্র এলইডি বাল্ব ব্যবহৃত হবে। সাশ্রয় হবে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ। যা সরবরাহ করা যাবে নতুন শিল্প কারখানায়। অর্থনীতির চাকা হবে আরও গতিশীল।